চাঁদপুরে ধানখেতে রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব, আতঙ্কে কৃষক
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় কয়েক দিন ধরে ধানখেতে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। গত তিন দিনে বোরোচর এলাকায় অন্তত ১০টি সাপ মেরেছেন কৃষকেরা। সাপের আতঙ্কে ধান কাটতে খেতে নামতে পারছেন না কৃষক ও শ্রমিকেরা। এতে এলাকায় ধান কাটা শ্রমিকের সংকট তৈরি হয়েছে।
বোরোচর এলাকার কৃষক সুমন ব্যাপারী বলেন, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের নিয়ে খেতে ধান কাটছিলেন। হঠাৎ অজগর সাপের মতো দেখতে তিন থেকে চার হাত লম্বা দুটি সাপ দেখতে পান। পরে সাপ দুটি পিটিয়ে মেরে ফেলেন। মৃত সাপগুলো উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তাকে দেখালে তাঁরা সেগুলোকে রাসেলস ভাইপার বলে চিহ্নিত করেন।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, গত কয়েক দিনে বোরো খেতে বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার সাপের আনাগোনা দেখছেন। এর মধ্যে কয়েকটি পিটিয়ে মারলেও কয়েকটি মারার আগেই নিরাপদ স্থানে চলে যায়। ধানখেতে সাপের উপদ্রব বাড়ায় কৃষক ও শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অনেকে সাপের ভয়ে ধান কাটতে চাচ্ছেন না। শ্রমিকসংকটে খেতের পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকেরা। কেউ কেউ বেশি মজুরি দেওয়ার কথা বলে ধান কাটছেন। গত এপ্রিলের শেষে ধান কাটার সময় বোরোচর এলাকার এক কৃষকের পায়ে সাপ কামড় দেয়। এরপর ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাড়িতে ফেরেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র দাস এলাকায় রাসেল ভাইপারের উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, সাপের বিষয়টি বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগকে জানানো হয়েছে। মেঘনার তীরবর্তী চরাঞ্চলে খাবারের খোঁজে এসব সাপ এসেছে বলে ধারণা করছেন। ২ থেকে ৪ ফুট লম্বা সাপগুলোর গায়ে ছোপ ছোপ গোলাকার কালো দাগ থাকে। এগুলো খুবই বিপজ্জনক। অনেকে অজগর ভেবে ভুল করেন। কৃষকদের এমন সাপ দেখলে কার্যালয়ে জানাতে বলা হয়েছে।
কৃষক গফুর বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহে খেতের পাকা ধান কাটছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। হঠাৎ তাঁরা দেখেন তিনটি বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার ধানখেতে ইঁদুর শিকারের চেষ্টা করছে। তখন শ্রমিকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সাপগুলো মেরে ফেলেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, কৃষকদের এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাতে খেতের ধান না কাটতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকসংকট থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কৃষকদের ধান কাটার মেশিন (হারভেস্টার) দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত কৃষক ও শ্রমিককে সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে।