টাকা নিয়ে ঈশা খাঁ হলে আসন দিতেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ হলের সামনে। আজ সকালে তোলাছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ঈশা খাঁ হলে আসন পেতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের টাকা দিতে হতো বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইশা খাঁ হলের ৩৪ জন শিক্ষার্থী। তাঁরা বলছেন, হয়রানির ভয়ে এত দিন চুপ ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগে ঈশা খাঁ হলের ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর নাম উঠে এসেছে। তাঁরা হলেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আদনান সামি, আরিফুল ইসলাম (পিয়াস), আরিফুল অনিক, রেজওয়ান, আকাশ, সাইফ ও হাসিব। হলের আসনের বিনিময়ে মোট ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সময়ে তাঁরা এই টাকা দিয়েছেন।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, যেসব শিক্ষার্থী ভর্তির পর প্রথম ধাপেই হলে উঠতে পারেন না, পরে তাঁদের হল প্রশাসনের বরাদ্দ দেওয়া আসন পেতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কাছে টাকা দিতে হতো। একই শিক্ষার্থীকে একাধিকবার টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এরপরও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আসন দেওয়া হতো না। এ অভিযোগ শুধু নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেখানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে আসা শিক্ষার্থীরাও একইভাবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে আসনের বিনিময়ে অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছেন।

আসন বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন অন্যায়, অত্যাচার ও চাঁদাবাজির অভিযোগও আছে। যাঁরা এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন, তাঁদের নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর করতে আসি। ওই সময় জানতে পারি, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের টাকা দিয়ে হলে সিট নিতে হয়। ঈশা খাঁ হলে ওঠার জন্য আমি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু রেজওয়ান-আল-রামীমকে সাড়ে সাত হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী

অভিযোগকারী এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর করতে আসি। ওই সময় জানতে পারি, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের টাকা দিয়ে হলে সিট নিতে হয়। ঈশা খাঁ হলে ওঠার জন্য আমি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু রেজওয়ান-আল-রামীমকে সাড়ে সাত হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমরা ওই চক্র ও পরিস্থিতির শিকার ছিলাম, যার বিচার হওয়া এখন জরুরি।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আদনান সামী বলেন, ‘সিট বাণিজ্যের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। হলে যাঁরা উঠেছেন, তাঁদের থেকে টাকা নিয়েছি, এমনটি কেউ বলতে পারবেন বলে আমি মনে করি না। হলে কারা সিট বাণিজ্যে করতেন, সেটিও আমার জানা নেই। আমি এই বিষয়ের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্তও নই। হয়তো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম বলে আমার সঙ্গে শত্রুতা করে নাম দেওয়া হচ্ছে।’

অনেকেই ভাবেন, রাজনীতি করা মানেই সিট বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকা। এ কারণেই হয়তো আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে সিট বাণিজ্যের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই যুক্ত নই।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা অনিক

অভিযুক্ত আরেক ছাত্রলীগ নেতা ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদীয় ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনিক বলেন, ‘হলের রাজনীতির সঙ্গে আমি যুক্তও ছিলাম না, অনুষদীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। হলে সিট দেওয়ার জন্য কারওর কাছে টাকা নিয়েছি বা আমার মাধ্যমে কাউকে হলে তুলেছি, এ রকম কোনো ঘটনা আমার মনে পড়ছে না। অনেকেই ভাবেন, রাজনীতি করা মানেই সিট বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকা। এ কারণেই হয়তো আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে সিট বাণিজ্যের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই যুক্ত নই।’

সিট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঈশা খাঁ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিয়াউল হক। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে সিট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত সবাইকে তদন্তের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ বিষয়ে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। শুধু সিট বাণিজ্য নয়, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া যেকোনো নির্যাতনের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব।’