বরিশালে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ২০

কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল বরিশাল - ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এই সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে মহাসড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এই সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।

আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল অবরোধ করে রাখায় বরিশাল বিভাগের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বরিশালের বিভিন্ন কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় জড়ো হন। এরপর তাঁরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা দেড়টার দিকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়লে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। গতকাল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল। এই সংঘর্ষে আহত ২০ জনের মধ্যে ২ জন রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার সকাল থেকেই নগরের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাড়াও বেশ কয়েকটি কলেজ এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন। বেলা ১১টা থেকে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। এতে ঢাকা-বরিশাল রুটসহ বিভাগের অভ্যন্তরীণ সব রুটের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, ঢাকাসহ সারা দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চলছে, ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই হামলার প্রতিবাদ জানাতেই কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, সরকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো বন্ধ করলেও তাঁরা কোনোভাবেই এই আন্দোলন থেকে সরে যাবেন না।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের কারণে নগরের অভ্যন্তরের সড়কগুলোতেও সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল বরিশাল - ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এই সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নলছিটি থেকে বরিশালে এসে আটকে পড়া মিরাজ হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, তিনি ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এলেও কোনো বাস ধরতে পারেননি। সব যানবাহন বন্ধ। কোনো বাস পাননি।

বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবরোধ

বিকেল ৪টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও আজ বেলা ৩টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে হলে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সাড়ে ৩টার দিকে হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে ক্যাম্পাসে আসেন। বাইরের মেসে থাকা শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে এসে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় জড়ো হন। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সেখান থেকে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে যান এবং সেখানে অবস্থান নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে বরিশালের সঙ্গে দক্ষিণের জেলা বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি জেলার একাংশের সড়ক যোগযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘মঙ্গলবার সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ-পুলিশ নারকীয় হামলা করেছে। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ছয়জন মারা গেছেন। এখন আর আমাদের পিছু ফেরার সুযোগ নেই। রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, আমরা এই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি, দাবি আদায় না করে আমরা রাজপথ ছাড়ব না। একই সঙ্গে হামলা ও হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনকে দমানোর জন্য দমনপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের পথ বেছে নিয়েও সরকার সফল হয়নি। এ জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু আমরা সরকারের এই নির্দেশনা মানছি না। কোনো অবস্থাতেই আমরা হল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি ফিরব না।’