উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের ২ হাজারের বেশি ঘর পুড়ল আগুনে

বেলা পৌনে তিনটার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। নিয়ন্ত্রণে আসে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে।

কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১১) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ছে রোহিঙ্গা বসতি। রোববার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১১) অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে। এর ফলে প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা গৃহহারা হয়েছে।

গতকাল রোববার বেলা পৌনে তিনটার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

রোহিঙ্গা নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা পৌনে তিনটার দিকে ওই আশ্রয়শিবিরের ডি, বি ও এ ব্লকের তিনটি পৃথক জায়গায় একসঙ্গে আগুন জ্বলে ওঠে।

রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, কিছুদিন ধরে ওই তিন ব্লকের কিছু ঘরে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) কিছু সদস্য অবস্থান করে আসছিলেন। এ জন্য পরিকল্পিতভাবে আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটাতে পারেন। তাঁদের ভাষ্য, এ ঘটনার সঙ্গে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে গত ১৮ জানুয়ারি ঘটা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের যোগসূত্র থাকতে পারে। কারণ, সশস্ত্র এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির পর আগুনের ওই ঘটনা ঘটেছিল।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকালের অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে। এর মধ্যে শতাধিক দোকান, ২০টির বেশি বেসরকারি সংস্থার হাসপাতাল–স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদানকেন্দ্র, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র, ৩৫টি মসজিদ-মাদ্রাসা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে শুকনো খাবারের পাশাপাশি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে।

আরআরআরসি মিজানুর রহমান আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৪-১৫ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা কিশোরকে দেশলাইসহ আটক করা হয়েছে। এই কিশোরকে ঘরে আগুন দিতে দেখেছেন বলে অনেকে জানিয়েছেন। তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন ঘরে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটা রহস্যজনক।

বালুখালী আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আগুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনে অনুসন্ধান চলছে।

আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা কামাল হোসেন, মরিয়ম বেগম ও রহিম উল্লাহ বলেন, বেলা পৌনে তিনটার দিকে ওই তিনটি ব্লকে একসঙ্গে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এ সময় প্রচণ্ড গরম পড়ছিল এবং উত্তর দিক থেকে বাতাস বইছিল। এতে মুহূর্তে ওই আগুন অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।

সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ভেতরে যাওয়া কঠিন। কারণ, বসতির ভেতর একটু পরপর গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটছে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২২২টি। এর মধ্যে ৯৯টি দুর্ঘটনাজনিত। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে আশ্রয়শিবিরে ২২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২০২২ সালে ৩২টি।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে এসে আশ্রয় নেয় ৮ লাখ রোহিঙ্গা।