ফরিদপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২৫
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় দুটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের সরইবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় চারজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ১২ জনকে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। সংঘর্ষের পর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তুজারপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরইবাড়ি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে। স্থানীয়ভাবে পক্ষ দুটি ‘তালুকদার গ্রুপ’ ও ‘খান গ্রুপ’ নামে পরিচিতি। তালুকদার পক্ষের নেতৃত্ব দেন সরইবাড়ি গ্রামের বাবুল তালুকদার (৭০) এবং খান পক্ষের নেতৃত্ব দেন সরইবাড়ি গ্রামের কবির খান (৫৫)।
এই দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। এর জেরে আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, চলে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত। দুই পক্ষের কয়েক শ লোক রামদা, ঢাল, সড়কি ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
তালুকদার পক্ষের আবু জাফর হাওলাদার (৫৮) বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে খান গ্রুপের লোকজন তাঁদের পক্ষের লোকজনের পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে যান। এরপর আমরা আদালতে মামলা করি। রোববার মামলার কপি ওঠায় খান গ্রুপ। এরপর বিকেলে আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তাঁরা। এর জেরে আজ সকালে আমাদের ওপর আক্রমণ করেছেন খান পক্ষের লোকজন।’
খান গ্রুপের শরীফ খান বলেন, ‘১০ থেকে ১২ দিন আগে তালুকদাররা আমাদের পক্ষের মহিউদ্দিনকে গ্রামের পথে পেয়ে মারধর করেন। গত শনিবার তালুকদাররা আমাদের পক্ষের লোকজনের সরইবাড়ি গ্রামের দু-তিনটি দোকান ভাঙচুর করেন। পাশাপাশি কয়েকটি নৌকা ভাঙচুর করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল। আজ সকালে তালুকদার পক্ষের লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেন এবং বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করেন।’
ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গুরুতর আহত চারজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা হলেন তালুকদার পক্ষের হাসমত হাওলাদার (৬৫), আবুল হোসেন মাতুব্বর (৬০), লতিফ হাওলাদার (৬০) ও খান পক্ষের রাজু চৌধুরী (২৯)।
চারজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং ১২ জনকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অধিকাংশের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।কর্মকর্তা শারমিন, চিকিৎসা কর্মকর্তা, ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন তালুকদার পক্ষের জুবায়ের হাওলাদার (৩২), পান্নু মাতুব্বর (৫০), ওবায়দুর রহমান (৪০), রসমত হাওলাদার (৪৪), আবু জাফর হাওলাদার এবং খান পক্ষের রুবেল চৌধুরী (৩৫), মিন্টু খান (৪৪), নাসির চৌধুরী (৪৪), শরীফ খান (২৭), রফিক চৌধুরী (২৭), রুবেল হাওলাদার (৩৫) ও ইয়াসিন (২৩)।
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা শারমিন বলেন, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সংঘর্ষে আহত রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছেন। চারজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং ১২ জনকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অধিকাংশের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকছেদুর রহমান বলেন, জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে তুজারপুর ইউনিয়নের সরইবাড়ি গ্রামে তালুকদার ও খান পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখনো কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি বা কাউকে আটক করা হয়নি।