পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত আনোয়ারের লাশের অপেক্ষায় স্বজনেরা
বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। স্বামী হারানোর শোকে ঘরের ভেতর খাটের ওপর বসে আহাজারি করছেন লিপি আক্তার। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনেরা। বারান্দায় বসে কাঁদছেন নিহত আনোয়ার হোসেনের (৩৬) বাবা রফিকুল ইসলাম। পাশে ছয় বছর বয়সী নাতনিকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন মা আনোয়ারা বেগম। লাশের অপেক্ষায় আছেন স্বজনেরা। কেউ কেউ দাফন কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আজ শনিবার বেলা একটার দিকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের আমজুয়ানি এলাকায় বিএসএফের গুলিতে মারা যাওয়া আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেল।
কথা বলতে চাইলে কাঁদতে কাঁদতে আনোয়ারের স্ত্রী লিপি আক্তার বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে একসঙ্গে বসে ভাত খাইলাম। পরে কার যেন একটা ফোন এল। আমাকে শুধু বলল, “তোমরা থাকো, আমি কিছুক্ষণ পরে আসতেছি।” এরপর আর আসেনি। ছোট্ট মেয়েটাকে এবার স্কুলে ভর্তি করাতে চাইছিলাম। এখন কী হবে আমাদের?’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবার সাত শতক ভিটা ছাড়া আনোয়ারদের আর কোনো জমিজমা নেই। বাবা স্থানীয় বাজারে মাংসের ছোট্ট দোকান চালান। আনোয়ার দরজির কাজ করতেন। পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ করতেন। ছয় বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে তাঁর।
গতকাল শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের মোমিনপাড়া সীমান্তের ৭৫১ নম্বর মেইন পিলারের ৮ থেকে ৯ নম্বর সাবপিলারের মাঝামাঝি এলাকায় পড়ে ছিল আনোয়ারের লাশ। ওই দিন দুপুরে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গরু চোরাচালান করতে গিয়ে আনোয়ার বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিএসএফের কাছে জোরালো প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে এলাকায় গুলির শব্দ পেয়েছিলেন এলাকাবাসী। সকালে স্থানীয় লোকজন মোমিনপাড়া সীমান্তে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে বিজিবির সহায়তায় লাশ উদ্ধার করে সদর থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। আজ সকালে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় গতকাল রাতেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আনোয়ারের ছোট ভাই আরিফুল ইসলাম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আনোয়ার দরজির কাজ করতেন এবং বেশ সহজ-সরল ছিলেন। সম্প্রতি তিনি সম্ভবত চোরাকারবারিদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। চোরাকারবারিরা সহজ-সরল ব্যক্তিদের টাকার লোভ দেখিয়ে এভাবে নিয়ে যান।
আনোয়ারের বাবা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক কষ্টে দুই ছেলে আর মেয়েকে মানুষ করেছি। আমার ছেলের জীবনে এমন ঘটনা ঘটবে কল্পনাও করিনি। এখন তার ছোট্ট মেয়েটার কী হবে, সেটাই ভাবছি। ছেলের লাশ বাড়িতে এলেই দাফন করব।’
বেলা দুইটার দিকে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে আনোয়ারের লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।