চট্টগ্রামে বিএনপির নেতা-কর্মীদের না পেয়ে স্বজনদের গ্রেপ্তার, হয়রানি

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সংসদ নির্বাচন–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন। আজ দুপুর ১২টায় নগরের দলীয় কার্যালয়েছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের না পেয়ে পুলিশ তাঁদের স্বজনদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে নগরের কাজীর দেউড়ির নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। একই সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাঁদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন (৭ জানুয়ারি) বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে চান্দগাঁও মৌলভী পুকুরপাড় এলাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। নেতা-কর্মীদের আহত করে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক  আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, নগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মোশারফ হোসেন, নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নওশাদ আল জাসেদুর রহমান, চান্দগাঁও থানা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রহমানসহ ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেন, মামলার পর থেকে পুলিশ দিনে-রাতে প্রতিটি ঘরে গিয়ে হয়রানি করছে। চান্দগাঁও থানা-পুলিশ বিএনপির নেতাদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করছে। লক্ষ্য করা ব্যক্তিকে বাসায় না পেয়ে বাবা, ভাই কিংবা অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। চান্দগাঁও থানা এলাকা এখন অনেকটা পুরুষশূন্য। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে সাধারণ মানুষও ঘরে থাকতে পারছেন না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিএনপির নেতা আবু সুফিয়ান, এরশাদ উল্লাহসহ উল্লেখিত নেতারা ওই দিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না; তারপরও তাঁদের আসামি করা হয়েছে। চান্দগাঁও শরাফত উল্লাহ পেট্রলপাম্পের ব্যবস্থাপক জামাল উদ্দিন ওই দিন বোয়ালখালীর বাড়িতে ছিলেন। তাঁকেও ২০ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

নেতা–কর্মীদের না পেয়ে স্বজনদের গ্রেপ্তারের উদাহরণ টেনে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৯ জানুয়ারি রাতে চান্দগাঁও থানা-পুলিশ চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নওশাদ আল জাসেদুর রহমানের মৌলভী পুকুরপাড়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে না পেয়ে বড় দুই ভাই প্রবাসী আবেদ মাহমুদ রহমান ও ব্যাংকার জাবেদুর রহমানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আবেদ মাহমুদ রহমানকে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া চান্দগাঁও থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এরশাদ হোসেনের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে না পেয়ে বড় ভাই মো. জাবেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া চান্দগাঁও ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. আবছারের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে না পেয়ে মামা মো. মামুনকে, ওয়ার্ড যুবদল নেতা জিসানকে না পেয়ে বাবা মো. ইলিয়াস, ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. শাহিনকে না পেয়ে বড় ভাই মো. শামিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

৭ জানুয়ারি চান্দগাঁও এলাকায় ঘটনার বিষয়ে দলীয় কোনো নির্দেশনা ছিল কি না এবং বিএনপিকে কেউ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিএনপি সব সময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। ডামি নির্বাচন বর্জনের দাবিতে বিএনপি হরতালের ডাক দিয়েছে। সেখানে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। অথচ হরতাল-মিছিল গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই আমরা নির্বাচনের দিন চান্দগাঁও এলাকায় সংঘটিত ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল, ইয়াসিন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মুহম্মদ ইদ্রিস প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আজ দুপুরে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত পুলিশ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ১৬ জনকে ঘটনাস্থল থেকে ধরা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে এ পর্যন্ত ৭২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। অহেতুক নিরীহ কাউকে পুলিশ হয়রানি করছে না। এমনকি আটকের পর সংশ্লিষ্টতা না থাকায় যাচাই-বাছাই শেষে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়।