পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারীরা আগামীকাল সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে শিক্ষকদের সঙ্গে পোষ্য কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্কের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বিতর্কে শিক্ষকেরা যদি পোষ্য কোটা নিয়ে যৌক্তিকতা দেখাতে পারেন, তাহলে এই কোটা বহাল থাকবে, অন্যথায় এই কোটা বাতিল করার দাবি শিক্ষার্থীদের।
সমাবেশে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় তাঁরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘জনে জনে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘জোহা স্যারের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’, ‘ছাত্রসমাজের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করতে জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েছি। পোষ্য কোটাও একটি অযৌক্তিক কোটা। এটা নিয়ে টালবাহনা করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পতন ঘটাতে ১০ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং চাকরির বাজারে বৈষম্যমূলক যে পোষ্য কোটা রয়েছে, সেটাকে লাল কার্ড দেখাতে আমাদের আজকের এই কর্মসূচি। পোষ্য কোটা হচ্ছে কিছু অযোগ্য মানুষদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানানোর মেশিন। সে মেশিনটাকে আমরা বিলুপ্ত করতে চাই। পোষ্য কোটার ব্যাপারে কোনো আলোচনায় যেতে আমরা রাজি নই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি একটাই, পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৯৩ সালে তৎকালীন উপাচার্যের ছেলেকে ৩৭ মার্কেও (নম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ন্যূনতম মার্ক ছিল ৪০। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে ২২, ২৫, ২৮, ৩২ এবং ৪০ মার্ক পায়নি, এমন শিক্ষার্থীদের কোটায় ভর্তি করা হয়েছে। পরে এই শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিভাগে গিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হয়। এটা সম্ভব হয়েছে তেল দিয়ে। যারা পরীক্ষায় চান্স পায় না, পরে এদেরকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমি চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা থাকুক।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে গত ৩১ অক্টোবর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। গত ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করার বিষয়টি জানায়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই দিন সন্ধ্যায় শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে আমরণ অনশনে বসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। উপাচার্যের আশ্বাসে পরদিন দুপুরে অনশন ভাঙেন তাঁরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পোষ্য কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে একটি ২০ সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে।
ওই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও কার্যকরী কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। এ ব্যাপারে গত শুক্রবার পর্যালোচনা কমিটির সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সভা হয়। সভায় শিক্ষার্থীরা পুরো কোটা বাতিল করার দাবি জানান এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে এ ঘোষণা না দিলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ঘোষণা না দেওয়ায় গতকাল রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজও বিক্ষোভ করলেন তাঁরা।