টেকনাফে পার্কে ঘুরতে যাওয়া ৫ রোহিঙ্গা কিশোরকে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি

কক্সবাজার জেলার মানচিত্র

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া ন্যাচার পার্কে ঘুরতে যাওয়া পাঁচ রোহিঙ্গা কিশোরকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরার ওই পার্ক এলাকা থেকে তাদের ধরে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও টেকনাফ থানা-পুলিশ অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও অপহৃত কিশোরদের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি।

তবে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের একটি সূত্র জানিয়েছে, অপহৃত কিশোরেরা টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা। তারা হলো আশ্রয়শিবিরের সি ব্লকের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. বেলাল (১৩), মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে নূর কামাল (১২), মো. উবায়দুল্লাহর ছেলে নূর আরাফাত (১২), বি ব্লকের মো. রফিকের ছেলে ওসমান (১৪) এবং ডি ব্লকের মাহাত আমিনের ছেলে নুর কামাল (১৫)।

ভুক্তভোগী কিশোরদের স্বজনদের দাবি, ঈদ উপলক্ষে ওই কিশোররা আশ্রয়শিবির থেকে ঘুরতে বেরিয়েছিল। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরণের পর মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করেছে।

১৬ এপিবিএনের পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোরেরা ঈদ উপলক্ষে আশ্রয়শিবির থেকে বাইরে ঘোরাঘুরি করতে গিয়েছিল। দমদমিয়া ন্যাচার পার্ক এলাকা থেকে তারা অপহরণের শিকার হয়। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। তবে মুক্তিপণের বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তাঁদের কিছুই জানায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশ্রয়শিবিরের একজন বাসিন্দা বলেন, গতকাল দুপুরে দমদমিয়া ন্যাচার পার্ক থেকে মুখোশধারী সাত থেকে আটজন সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ওই কিশোরদের অপহরণ করে গহিন পাহাড়ে নিয়ে যায়। পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানা আছে। আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রাতে সন্ত্রাসীরা ভুক্তভোগী পরিবারে ফোন দিয়ে জনপ্রতি চার লাখ করে মুক্তিপণ দাবি করেছে। মুক্তিপণ না দিলে ওই কিশোরদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম বলেন, অপহরণের বিষয়টি শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত অপহৃত কিশোরদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ পাননি। এরপরও পুলিশ ওই কিশোরদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে।

নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ওই কিশোরদের অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ভুক্তভোগী পরিবারে ফোন করে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এ কারণে তাঁরা মুখ খুলতে চাচ্ছে না। বিষয়টি এপিবিএনকে জানানো হয়েছে।

গত ৬ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৭ জন ব্যক্তিকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকি ২৩ জন রোহিঙ্গা। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে।