চারবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন করা হলো না জাফর আলীর
টানা চতুর্থবারের মতো কুড়িগ্রাম-২ (কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাফর আলী। কিন্তু আগের তিনবারের মতো এবারও তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আসন ভাগাভাগিতে এখানে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য পনির উদ্দিনকে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
দলীয় হাইকমান্ডের পরামর্শে এবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে কুড়িগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাফর আলী। এর আগে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন তিনি। তবে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে মো. জাফর আলী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও দলীয় প্রার্থী আছলাম হোসেন সওদাগরকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ ছাড় দিয়েছে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানকে।
এমন অবস্থায় দুটি আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়েছেন। জোট-মহাজোটের কারণে বারবার মনোনয়ন পেয়েও আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে কেউ কেউ ফেসবুকে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, বারবার জেলা সদর আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় উন্নয়ন বঞ্চনার পাশাপশি জেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল কাদের বলেন, পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রামের উন্নয়নের জন্য মো. জাফর আলীর মতো ত্যাগী নেতার প্রয়োজন ছিল। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় তৃণমূল রাজনীতিতে যে হতাশা ছিল, তা কেটে গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টিকে গতকাল রোববার এই আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটি কুড়িগ্রামবাসীর জন্য দুর্ভাগ্য।
তবে দলের স্বার্থকেই বড় করে দেখছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাফর আলী। তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা যা ভালো মনে করেছেন, তিনি সেটাই করেছেন।’ তৃণমূল রাজনীতিতে হতাশার বিষয়ে তিনি বলেন, তৃণমূলের স্বার্থ দেখতে গিয়ে যদি দলীয় বৃহত্তর ক্ষতি হয়, তবে মাঝেমধ্যে তৃণমূলের হিসাব বাদ দিতে হয়। রাজনীতি করতে গেলে দলীয় ও জাতীয় স্বার্থ আগে দেখতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুজ্জামান বলেন, সদর আসনে দীর্ঘদিন ধরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নেই। ফলে কুড়িগ্রামবাসী অনেক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জাতীয় পার্টিকে এই আসন ছেড়ে দেওয়ায় দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়েছেন।
এদিকে কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী) আসন থেকে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আছলাম হোসেন সওদাগর। এখানে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান নির্বাচন করবেন। জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আছলাম হোসেন সওদাগর কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে রাজি হননি। তবে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা হতাশার কথা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দুই প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের পত্র প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে জাকের পার্টির তিন প্রার্থী ও কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু হানিফ, আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগর ও কুড়িগ্রাম-২ আসনের মো. জাফর আলী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।