সন্দ্বীপে ইউনিয়ন পরিষদে হামলা, জেলা পরিষদ সদস্যের বাড়ি লুট

সন্দ্বীপে জেলা পরিষদের সদস্য ও যুবলীগ নেতা ছিদ্দিকুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়৷ গতকাল রাতে তোলাছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় হামলার শিকার হয়েছেন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। অপর ঘটনায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে লুট করা হয়েছে জেলা পরিষদ সদস্য ও সন্দ্বীপ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমানের বাড়ি।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ভাঙচুর করা হয় বলে জানান ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। হামলায় তিনি নিজেও আঘাত পেয়েছেন বলে জানান। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মোটরসাইকেলচালক শিপন শীলের ওপর বিএনপির কয়েকজন সমর্থক চড়াও হন। খবর পেয়ে তিনি তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। শিপন শীল দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন।

আবুল খায়ের বলেন, ‘শিপন মুঠোফোনে সাহায্য চাইলে আমি ঘটনাস্থলে যাই। সে সময় স্থানীয় বিএনপির কর্মী–সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। উপস্থিত যুবকেরা মিছিলের লোকজনকে ডেকে আনলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আমি তখন পরিষদ ভবনে অবস্থান করছিলাম। তাঁরা দলবল নিয়ে এসে পরিষদে হামলা চালান এবং আমার ওপরও চড়াও হন। বিএনপির সিনিয়র নেতারা এ সময় হামলা ঠেকাতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়েছেন বলেই বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’

হামলায় ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, লাঠিসোঁটা নিয়ে পরিষদের দরজা–জানালায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ সময় চেয়ারম্যান আবুল খায়ের পরিষদের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারীরা তাঁকে আঘাত করেন। সন্ধ্যায় নৌবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। শারীরিক আঘাতের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল খায়ের জানান, তিনি এখন ভালো আছেন। নৌবাহিনীর সহায়তায় তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন।

এদিকে রাতে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য ছিদ্দিকুর রহমানের বাড়িতেও হামলা, ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালিয়েছেন বিএনপির কর্মী–সমর্থকেরা। ছিদ্দিকুর সন্দ্বীপ উপজেলা যুবলীগেরও সভাপতি। হামলার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বাড়ি মুছাপুর ইউনিয়নের ধোপার হাটের কাছে। ধোপার হাটের বিক্ষোভ শেষে তাঁর বাড়িতে হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁর এক কাছের আত্মীয়। এ বিষয়ে জানতে ছিদ্দিকুর রহমানের মুঠোফোনে কল দিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর ভাগনে আকাশ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে প্রায় ৩০০–৪০০ লোক ছিদ্দিকুরের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় বাড়ির তিনটি ঘর ভাঙচুর করা হয়। লুট করা হয় স্বর্ণালংকার, টাকা ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র। ছিদ্দিকুর রহমান এ সময় বাড়িতে ছিলেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

হামলার বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলমগীর হোসাইন ঠাকুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব হামলা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তবে আমরা এসব ঠেকাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’

ইউনিয়ন পরিষদ ও চেয়ারম্যানের ওপর হামলার বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা বলেন, ‘সন্দ্বীপের চেয়ারম্যানদের প্রায় সবাই বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। নিরাপত্তা চেয়েছেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাঁরা পরিষদে ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করব নিরাপত্তা দিতে। তবে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। থানার কার্যক্রম এখনো পুরোদমে শুরু করা যায়নি। এ মুহূর্তে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁদের ভাবতে হবে।’