এইচএসসি পাস করে সংসারের হাল ধরতে ঢাকার সাভারের জিরাবো এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি নেন সুজন হোসেন (২৩)। তাঁর আয়েই বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের কোনোমতে চলছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে নিহত সুজন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে এখন দিশেহারা তাঁর পরিবার। কীভাবে এখন সংসার চালাবেন ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা মা–বাবা।
নিহত সুজন হোসেনের বাড়ি লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম শহিদুল ইসলাম ও মা রেজিয়া বেগম। গত ৫ আগস্ট দুপুরে সাভারে ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেন তিনি। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় সুজনের মাথায় গুলি লাগে। এর পর থেকে তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। ওই দিন বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজার পর গভীর রাতে একটি হাসপাতালে সুজনের লাশের সন্ধান পান প্রতিবেশী মোস্তফা মিয়া। ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামে সুজনের লাশ দাফন করা হয়।
নিহত সুজন হোসেনের চার বোন। সবার বিয়ে হলেও ছোট বোন পাকিজা খাতুনের যৌতুকের ৮০ হাজার টাকা দিতে পারেননি। তাই দুই মাস আগে পাকিজার স্বামী দুই শিশুসন্তানসহ তাঁকে সুজনদের বাড়িতে রেখে গেছেন। সুজন তাঁদেরও ভরণপোষণের খরচ চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ সুজনের এমন মৃত্যুতে কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না তাঁর পরিবার।
সম্প্রতি সুজনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ৪ শতাংশ জমি ওপর জরাজীর্ণ ঘরবাড়ি। সেখানেই বাবা, মা, ছোট বোন ও তাঁর সন্তানদের বসবাস। বাড়ির পাশেই নিহত সুজনের কবর। স্বজনেরা জানালেন, তাঁদের বাড়িতে চুলা জ্বলেনি কয়েক দিন। প্রতিবেশীদের দেওয়া ভাত খেয়ে দিন পার করেছেন। সুজনের দাদি বলেন, ‘পুলিশে গুলি করছে, হামার ছোয়াক, হামরা বিচার চাই।’
সুজনের বোন পাকিজা খাতুন বলেন, ভাই হত্যার বিচার চান তিনি। একমাত্র ভাই তাঁদের সব বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। ছয় মাসের শিশুসন্তান পাকিজার কোলে। তাঁর স্বামীর বাড়ির লোকজন যৌতুকের ৮০ হাজার টাকার জন্য তাঁকে বাবার বাড়িতে রেখে গেছেন। ভাই তো মারা গেছে, এখন টাকা দেবে কে? এই চিন্তায় অস্থির তিনি।
ছেলের কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা রেজিয়া বেগম। বললেন, মাসের শেষে ছেলে যে টাকা পাঠাত, সেই টাকায় সংসার চলত, এখন সংসার চালাবেন কীভাবে?
সুজনের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশের গুলিতে তাঁর ছেলে মারা গেছে। তিনি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। জায়গাজমিও নেই। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এখন তাঁদের কী হবে?