সময়ের মুখ

কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন, এটাই তো বড় কথা

হাওরে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। বোরো ধান কাটার মৌসুমে বজ্রপাত শুরু হলে কৃষকদের আশ্রয় নেওয়ার কোনো জায়গা থাকে না। তৈরি হয় মৃত্যুঝুঁকি। সেই ঝুঁকি এড়াতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে হাকালুকি হাওরের পূর্ব সিংগুর এলাকায় একটি ‘কৃষকছাউনি’ নির্মিত হয়েছে। ফলে রোদ-ঝড়ের মধ্যে আশ্রয় নিতে পারছেন কৃষকেরা। ‘পূর্ব সিংগুর নতুন কুঁড়ি ক্লাব’ নামের স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠন এ উদ্যোগ নেয়। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বশির আল ফেরদৌসের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কল্যাণ প্রসূন

প্রথম আলো:

‘কৃষকছাউনি’ করার কারণ কী?

বশির: কৃষকেরা রোদে পুড়তেন, বৃষ্টিতে ভিজতেন, আবার বজ্রপাতে ভয়ের মধ্যে থাকতেন। তাঁদের কথা চিন্তা করেই এটা করা হয়েছে।

প্রথম আলো:

ভাবনাটা কার মাথায় এসেছিল?

বশির: আমাদের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লুৎফুর রহমানের মাথায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।

প্রথম আলো:

কৃষকছাউনির কাজ শেষ হলো কবে?

বশির: প্রায় পাঁচ মাসে আগে।

প্রথম আলো:

খরচ কত হয়েছে?

বশির: প্রায় দুই লাখ।

প্রথম আলো:

টাকা পেলেন কোথায়?

বশির: বড় অংশ দিয়েছেন লুৎফুর রহমান। বাকিটা সংগঠনের সদস্য ও সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রথম আলো:

কৃষকছাউনি তো ইট–সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করেছেন। আয়তন কত?

বশির: দৈর্ঘ্যে ১৫ ফুট, প্রস্থে ৮ ফুট।

প্রথম আলো:

কতজন কৃষক ছাউনিতে আশ্রয় নিতে পারেন?

বশির: ২০ থেকে ২৫ জন।

প্রথম আলো:

একটি নলকূপও বসিয়েছেন। কারণ কী?

বশির: গরমে তৃষ্ণা নিবারণ, হাত-মুখ ধোয়া ও অজু করার পানির ব্যবস্থা করতে।

প্রথম আলো:

কৃষকেরা কি উপকৃত হচ্ছেন?

বশির: অবশ্যই। নির্মাণকাজ চলাকালে বোরো মৌসুম চলছিল। তখনই কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে কৃষকেরা এসে বিশ্রাম নিতেন।

প্রথম আলো:

কৃষি বিভাগের কেউ দেখে গেছেন?

বশির: উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন এসেছিলেন। ঘুরে দেখেছেন। তিনি এ কাজের প্রশংসা করেছেন।

প্রথম আলো:

সংগঠনের একজন সদস্য হিসেবে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

বশির: কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন, এটাই তো বড় কথা।

প্রথম আলো:

আপনাদের সংগঠন কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?

বশির: ১৯৯৬ সালে।

প্রথম আলো:

আর কী কী কাজ করেন?

বশির: দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিয়ে ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। করোনাকালে মানুষকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে এতিমখানায় ইফতার করানো হয়। এলাকার মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বাড়াতে ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে প্রতিবছর কোথাও না কোথাও বেড়ানোর আয়োজন করা হয়।

প্রথম আলো:

কৃষকছাউনির মতো স্থাপনা আরও করার পরিকল্পনা আছে?

বশির: আরেকটি কৃষকছাউনি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নলকূপ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি কাজও কিছুদিনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

বশির: প্রথম আলোকেও। ভালো কাজের সঙ্গে প্রথম আলোর পথচলা আরও দীর্ঘ হোক।