চুরির অভিযোগে শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন, ১৩ দিন পর তরুণের মৃত্যু

নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান মো. ইসরাফিল মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় মসজিদের মাইকের ব্যাটারি চুরির অভিযোগ তুলে এক তরুণকে মারধর ও শরীরে গরম পানি ঢেলে স্থানীয় বিএনপি নেতা কামরুল হাসান (লিটন) ও তাঁর সহযোগীরা নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার ১৩ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই তরুণের মৃত্যু হয়েছে।

মৃত ইসরাফিল মিয়া (২৪) উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিনের ছেলে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতা কামরুল হাসান শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সহযোগীরা হলেন বাবুল মণ্ডল ও শফিকুল ইসলাম। ওই তিনজনের বাড়ি গাজীপুর ইউনিয়নের শৈলাট মেডিকেল মোড়ে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইসরাফিলের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে তাঁর ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান কামরুল হাসানসহ কয়েকজন। এরপর পাশের একটি স্কুলমাঠে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে কামরুল ও উপস্থিত অন্য লোকজন স্থানীয় একটি মসজিদের মাইকের ব্যাটারি চুরির সঙ্গে জড়িত হিসেবে ইসরাফিলকে অভিযুক্ত করেন। ইসরাফিল বারবার চুরি না করার কথা জানালেও তাঁর ওপর নির্যাতন চালাতে থাকেন কামরুল। স্থানীয় বাবুল মণ্ডল, শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন তাঁর ছেলেকে মারধর করেন। তাঁর ছেলে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ইসরাফিলের শরীরে গরম পানি ঢেলে দেওয়া হয়। এ সময় তাঁর পরিবারের লোকজন চিৎকার শুরু করলে ইসরাফিলকে স্কুলমাঠে ফেলে রাখা হয়। ইসরাফিলকে মারধর করা হয়নি মর্মে একটি সাদা স্ট্যাম্পে জোর করে তাঁর (নাসির উদ্দিনের) স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এরপর ছেলেকে তাঁর জিম্মায় দিয়ে সবাই চলে যান। প্রথমে তাঁকে শ্রীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় নাসির উদ্দিন তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ছয়-সাতজনের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। নাসির উদ্দিন দাবি করেন, থানায় অভিযোগ করার পর থেকে তাঁকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাঁকে মেরে ফেলা হবে বলেও দফায় দফায় লোকজন দিয়ে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা কামরুল হাসানের মুঠোফোনে ফোন করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। চেষ্টা করেও অভিযুক্ত অন্য দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ইসরাফিলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তাঁরা এলাকায় নেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাঁশবাড়ি গ্রামে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানালেন, বাঁশবাড়ি গ্রামের ব্যাপারী বাড়ি মসজিদের মাইকের ব্যাটারি চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পেয়ে এলাকার কয়েকজনের নেতৃত্বে ইসরাফিল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তাঁকে শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এনে মারধর করা হয়। তবে মরে যাওয়ার মতো মারধর করা হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, মারধর করে তাঁর কাছ থেকে ব্যাটারি উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়েছিল। অতি উৎসাহী হয়ে তাঁর শরীরে চা ও চায়ের কেটলি থেকে গরম পানি ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। এতে শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়।

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাইকের ব্যাটারি চুরির সঙ্গে ইসরাফিলের জড়িত থাকার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ ছিল না। তবু তাঁকে মারধর করা হয়েছে। বেদম মারধরের কারণে ইসরাফিল গুরুতর আহত হয়েছেন। সেখানে উপস্থিত কেউ তাঁকে ফেরাতে আসেননি। স্বজনেরা কাছে আসতে চাইলে তাঁদের আসতে দেওয়া হয়নি।

এ ঘটনায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন।