কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিতে পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ-সমাবেশ

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। বুধবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের এনএসরোডের থানা মোড় এলাকায়ছবি: তৌহিদী হাসান

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে তাঁরা এই সময় বেঁধে দেন।

আজ ১০টার দিকে শহরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সমাবেশ শেষে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী এনএস রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি থানা মোড়, পাঁচ রাস্তার মোড় হয়ে মজমপুর ট্রাফিক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমবেত হয়। বেলা ১১টার দিকে সেখানে আবার সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার, মিরাজুল ইসলাম, হাবলু মোল্লা, আবদুর রাজ্জাক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম উল হাসান, যুববিষয়ক সাবেক সম্পাদক মেজবাউর রহমান, খোকসা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান স্বপন প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৩১ সদস্যবিশিষ্ট যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা কুতুব ও জাকিরের ‘পকেট’ কমিটি। এই কমিটিতে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের রাখা হয়নি। এটা দলের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। কুতুব ও জাকিরের ‘পকেটের’ লোকজনকে রাখা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে কমিটি করা হয়েছে। শেখ সাদী নামের এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। শেখ সাদীকে বিগত ১৫ বছর কুষ্টিয়া জেলায় বিএনপির কোনো আন্দোলন–সংগ্রামে দেখা যায়নি। তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিনের উদ্দেশে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, ‘আন্দোলন–সংগ্রামে আপনি কোথায় ছিলেন? গত ৫ আগস্ট কোথায় ছিলেন? এই কমিটি মানি না, মানব না। এই অবৈধ কমিটি প্রত্যাখ্যান করলাম। কমিটি বাতিল না হলে রাজপথে থেকে দাঁতভাঙা জবাব দেব।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম উল হাসান বলেন, ‘আন্দোলন–সংগ্রাম করে যারা দিনের পর দিন জেল খেটেছে, বাড়িছাড়া হয়ে মাঠে মাঠে থেকেছে, সেই ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কোনো কমিটি হতে পারে না।’

পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নীতিমালা মেনেই ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। কমিটি গঠনে কোনো বিচ্যুতি হয়নি। শেখ সাদীর বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করেছেন। এ জন্য তাঁকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গত সোমবার ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন–অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাতিল করা হয়। ২০১৯ সালের ৮ মে সৈয়দ মেহেদী আহমেদকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এর আগে ২০১২ সালে গঠিত কমিটিতে এই দুজন একই পদে ছিলেন।