‘ভোট দিছি তিনডা, পানও খাইছি তিনডা’
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার জোবাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একটি ভোটকেন্দ্র এই বিদ্যালয়। আজ বুধবার সকালেও এখানে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটার উপস্থিতি।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকেরা নানাভাবে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে কাজ করছেন। এই কেন্দ্রের মতো প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই বিনা খরচে ভ্যানে করে ভোটারদের আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের প্রবেশপথে ও বিদ্যালয়ের আশপাশে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে করা অস্থায়ী বুথে দেওয়া হচ্ছে ভোটার স্লিপ। কেন্দ্রে প্রবেশপথে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর এমন সাতটি বুথ দেখা গেল। বুথের টেবিলে সাজানো পান-সুপারি, জর্দা ও চুন। দুটি বুথে পানের সঙ্গে বিড়ি-সিগারেটও আছে। বুথে থাকা প্রার্থীর সমর্থকেরা বলেন, ভোট দেওয়ার আগে ও ফেরার পথে সবাই পান খাচ্ছেন।
সেখানকার একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী সৈকত শেখ বলেন, ‘আমরা এখানে ভোটার স্লিপ দিচ্ছি। সঙ্গে ভোটারদের জন্য পান-বিড়ির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। ভোটার স্লিপের সঙ্গে পান-বিড়ি দেওয়া হয়।’
পান চিবুতে চিবুতে ভোট দিয়ে বেরিয়ে ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল সেখ বললেন, ‘আমরা পানও খাইছি, ভোটও দিছি। দারুণ ভালো লাগজে। ভোট দিছি তিনডা (চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান), পানও খাইছি তিনডা।’ বলেই হাসতে হাসতে হাতে থাকা পানের বোঁটার লাগানো চুন তুলে নিলেন মুখে।
তখন পাশের বুথে ভোটার নম্বর খুঁজতে দাঁড়ান রহিমা বেগম। তবে আগেই তাঁকে হাতে নিতে দেখা গেল পান-সুপারি। তা মুখে গুঁজে নাম-ঠিকানা দিয়ে ভোটার নম্বর খুঁজে নেন রহিমা। জানতে চাইলে বললেন, ‘ভোট তো আমাদের গ্রামে একটা উৎসবের মতো। দেহেন না, কেমন যেন মেলা মিলছে।’
কেন্দ্রের বাইরে ছোট বাজার ঘিরে দেখা গেল বেশ কিছু অস্থায়ী দোকানপাটও। ভোটারদের সঙ্গে বাড়ির ছোট সদস্যরাও এসেছে সেখানে। কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারলেও এসব দোকান থেকে নানা খাবার কিনতে দেখা যায় তাদের।
জোবাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নারী-পুরুষ মিলে মোট ভোটার ২ হাজার ১৪৫ জন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দীনেশ চন্দ্র বলেন, সকালে বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছু কম ছিল। শুরুর পর প্রথম ১ ঘণ্টায় ১০০ ভোট পড়ে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৪৬৭টি, অর্থাৎ ২২ ভাগ। সব প্রার্থীর এজেন্টই উপস্থিত আছেন। মোট ৫৪ জন এজেন্ট আছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কচুয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ভোটের আগে দিন বিকেলে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক কে এম ফরিদ হাসান (আনারস) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মীর জায়েসী আশরাফিকে (মোটরসাইকেল) সমর্থন দেন। অপর দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমা সরোয়ার (ঘোড়া) ও রাড়ীপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (দোয়াত-কলম)। আজ বেলা পৌনে ২টা পর্যন্ত নির্বাচনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি কচুয়াতে।