‘বাজারের আগুনে আমরা প্রতিদিনই পুড়ছি’

মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাজারে সরবরাহ কমেছে সব ধরনের সামুদ্রিক মাছের। এতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে। বাগেরহাট কাঁচা বাজারে সোমবার
ছবি: প্রথম আলো

‘জিনিসপত্রের দাম যে এত বেশি, তা বলে বোঝানো যাবে না। ইনকাম (আয়) তো সীমিত, আমরা মধ্যবিত্তরা কী করে বাজার করে খাব? এভাবে আর চলা যায় না। এখন অবসরে যাওয়া স্কুলশিক্ষক স্বামীর সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছি। কোন জিনিসটার দাম নাগালে আছে, বলেন? বাজারের আগুনে আমরা প্রতিদিনই পুড়ছি।’

বাগেরহাট শহরের প্রধান কাঁচাবাজারে আজ সোমবার সকালে বাজার করতে এসেছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রশিদা খানম। নিত্যপণ্যের চড়া দাম নিয়ে এভাবে ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। কথা বলে জানা যায়, ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০ টাকায় কিনেছেন। সেখানে বেগুনের কেজি দেখা গেল ১৪০ টাকা আর টমেটো ২৬০ টাকা।

সেখানে কথা হয় কলেজপড়ুয়া ইমরান শিকদারের সঙ্গেও। তিন দোকান ঘুরে দাম শুনে মুঠোফোনে বাড়িতে কথা বলছিলেন তিনি। তিনি ফোনে বললেন, ‘ও মা, এক হাজার টাহায় তো সবজি কেনাও হবে না?’ কথা বলে জানা গেল মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এক সপ্তাহ করে বাজার করেন ইমরান। বাবা না থাকায় পড়াশোনা-সংসার সব মিলে চাপ আছে।

ইমরান বলেন, দুদিন আগে ইলিশের মেলা বলে মাইকিং শুনে মা সন্ধ্যায় বাজারে পাঠিয়েছিলেন। তবে সাইকেল চালিয়ে কেবল আসা-যাওয়াই হয়েছে। দামের কারণে আর মাছ কিনতে পারেননি। ইলিশ শিকার বন্ধ থাকবে বলে সে সময় খুব হাঁকডাক দিয়ে মাছ বিক্রি হলেও জাটকা ইলিশের কেজিও ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

আজ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জেলায় আরেক দফা বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। দুই সপ্তাহ আগের যে মিষ্টিকুমড়ার কেজি ছিল ৩০-৩৫ টাকা, তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। শসা ৬০-৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, পটোল ৯০ টাকা, কচুর মুখি ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গেল সপ্তাহেও এসব সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কম ছিল।

দাম বাড়ার কারণ কী—জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন, কদিন বৃষ্টি গেছে, সবজিবাগান নষ্ট হয়েছে। তাই মরিচসহ সব সবজির দামই বেশি। বিক্রেতা লতিফ শেখ বলেন, কয়েক জেলায় বন্যা হচ্ছে। বৃষ্টিতে এদিকের অনেক সবজির বাগান নষ্ট হয়ে গেছে।

বাগেরহাট কাঁচা বাজারে সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও দাম চড়া। সোমবার সকালে
প্রথম আলো

এদিকে বেড়েছে চালের দামও। বুলেট ও স্বর্ণা বুলেট প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। জাতভেদে চিকন চাল ৩-৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৯০ টাকায়।

মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাজারে সরবরাহ কমেছে সব ধরনের সামুদ্রিক মাছের। এতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে। বাজারে রুই, কাতলা, মৃগেল, চায়না পুঁটি, সিলভার কার্প আকারভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ট্যাংরা মাছ, হরিণা চিংড়ি, চামি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়।

কম দামের মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছও বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৫০-২৮০ টাকায়। চাষের কইয়ের কেজি ২০০-২৫০ টাকা, শোল ৩০০-৬০০ টাকা, টাকি ২০০-৩০০ টাকা, রূপচাঁদা ৬০০-৭০০ টাকা, পুঁটি মাছ ৬০-১২০ টাকা, জাবা ২৬০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গৃহিণী সালমা আক্তার বলেন, ‘এক সপ্তাহে মরিচের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। সবকিছুর যে দাম, মানুষ খাবে কী? সরকারের কাছে আকুল আবেদন, বাজারের দিকে একটু নজর দেন।’

বাজার করতে আসা রিকশাচালক আবুল হাসান বলেন, ‘সপ্তাহে সপ্তাহে শুধু দাম বাড়ছে। এমন হলে কীভাবে চলব আমরা। কেউ তো দুই টাকা ভাড়া বেশি দিতে চায় না।’

বাজার তদারকির জন্য নিয়মিত অভিযানের কথা জানিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাগেরহাট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল ইমরান বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার ‘মনিটরিং টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়েছে। কোথাও অসংগতি-অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।