সদরঘাটে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ছে
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে। তবে টার্মিনালে আসতে সড়কে তীব্র যানজট ও পন্টুনে হকারদের দৌরাত্ম্যের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
সদরঘাট টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪৯টি লঞ্চ ঢাকা নদীবন্দর ছেড়ে যায়। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চল থেকে সদরঘাট টার্মিনালে এসেছে ৬১টি লঞ্চ।
আজ সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে বরগুনার আমতলী; পটুয়াখালী; ভোলার ইলিশা, লালমোহন; পিরোজপুরের হুলারহাট ও ভান্ডারিয়া নৌপথে যাত্রীদের চাপ আছে। এসব রুটের যাত্রীরা পরিবার-পরিজন ও মালামাল নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের লঞ্চের ডেকে বসে আছেন। পন্টুনে ভেড়ানো বেশির ভাগ লঞ্চের ডেক যাত্রীতে পূর্ণ ছিল। তবে পন্টুনে হকাররা ফলের পসরা ও ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানোর কারণে যাত্রীদের চলাচল করতে বেগ পেতে হয়েছে।
রাজধানীর কুড়িল থেকে আসা পটুয়াখালীগামী এমভি পূবালী-১২ লঞ্চের যাত্রী আফতাব হোসেন বলেন, ‘বিড়ম্বনা এড়াতে লঞ্চযোগে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অথচ পন্টুনে হকারদের কারণে লঞ্চে উঠতে সমস্যা হয়েছে। একদিকে টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড়। অন্যদিকে হকারদের দৌরাত্ম্য। এতে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পন্টুনে চলাচল করতে বিপাকে পড়তে হয়েছে। ভাবছি, ফেরার সময় বাসে ঢাকায় ফিরব।’
আমতলী রুটে চলাচলকারী এমভি সুন্দরবন লঞ্চের কর্মচারী রনি মিয়া বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা ছয়টায়। কিন্তু বেলা আড়াইটার মধ্যে লঞ্চের ডেক যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে গেছে।’
ভাষানচরগামী এমভি সম্রাট-২ লঞ্চের যাত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, ‘ভেবেছি, শুক্রবার ছুটির দিনে সড়কে যানজট তেমন থাকবে না। কিন্তু সড়কে ব্যাপক যানজট থাকায় ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। গুলিস্তান থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত আসতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। ঈদযাত্রায় ভোগান্তির যেন শেষ নেই।’
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগাগামী এমভি সাত্তার খান-১ লঞ্চের যাত্রী রিফাত হোসেন বলেন, তাঁদের লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। যানজট এড়াতে সকালের দিকে টার্মিনালের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। এরপর তীব্র যানজটের কবলে পড়েছেন। তিনি বলেন, অন্তত ঈদ মৌসুমে যানজট নিরসনে পুলিশের কঠোর ভূমিকা পালন করা উচিত।
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের সদস্য ও মুলাদীগামী এমভি অভিযান লঞ্চের মালিক হামজা লাল প্রথম আলোকে বলেন, আজ যাত্রীদের চাপ তেমন নেই। কাল শনিবার গার্মেন্টস ছুটি হলে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে। যাত্রীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে বিশেষ লঞ্চ চলাচল করবে।
নৌ পুলিশের সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, পন্টুন ও টার্মিনাল থেকে হকারদের উচ্ছেদ করতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। আজ ছয় থেকে সাতজন হকারকে আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের মালামাল জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, সড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। সড়কে যান চলাচলে যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য পুলিশ সদস্যরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আজমল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করতে দেওয়া হবে না। যেসব লঞ্চ নির্দেশনা উপেক্ষা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।