নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার মুড়াপাড়া মঙ্গলখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী এমন অভিযোগ করেন।
মুড়াপাড়া মঙ্গলখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটির অধিকাংশ ভোটার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের ঋষিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর বলেন, কেটলি প্রতীকের লোকজন উপজেলার হিন্দু–অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মানিক হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল জব্বার ঋষিপাড়া এলাকায়, কায়েতপাড়ার নাওরা এলাকায় মোশারফ হোসেনের লোকজন এবং কাঞ্চনে শফিকুল ইসলাম বেছে বেছে হিন্দু ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছেন। তাঁরা নৌকায় ভোট দেবেন বলেই কেটলির লোকজন এমনটা করছেন।
পরে গোলাম দস্তগীর লোকজন নিয়ে কেন্দ্রের পাশে ঋষিপাড়া এলাকায় যান। সেখানে ইউপি সদস্য মানিক হোসেনকে অবস্থান করতে দেখে তাঁকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন। পরে মানিক হোসেন এলাকা ছেড়ে চলে যান।
তবে মন্ত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহজাহান ভূঁইয়ার নির্বাচনী সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুল জব্বার ও মানিক মিয়া এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে কেন্দ্রের সামনে ছিলেন। তাঁরা কাউকে বাধা দেননি।’
এদিকে কেন্দ্রের বাইরে ভোট চাওয়া নিয়ে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ার মাহমুদাবাদ সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলাম দস্তগীর গাজী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। এতে ওই এলাকার ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ এসে উভয় পক্ষের লোকজনকে কেন্দ্রের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়।
সকাল নয়টার দিকে কেন্দ্রটিতে ভোট দিতে আসেন শাহজাহান ভূঁইয়া। ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় ঠিকঠাক ভোট হচ্ছে। তবে এই কেন্দ্রে (মাহমুদাবাদ) নৌকার লোকজন ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তা ছাড়া সকালে তারাব হাজী নুরুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের শুরুতেই এজেন্টদের কাছ থেকে রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর রেখে দেওয়া হয়েছে। আমি এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। টানা চতুর্থবারের মতো তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তার বিপরীতে সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারসহ আট প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাজাহান ভূঁইয়া (কেটলি), গোলাম দস্তগীরের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মোর্তুজা (ঈগল), গোলাম দস্তগীরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা মো. হাবিবুর রহমান (আলমিরা) ও মো. জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (ট্রাক) প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন।
দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের এ কে এম শহিদুল ইসলাম (মোমবাতি) ও জাকের পার্টির মো. জোবায়ের আলম (গোলাপ ফুল) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
আসনটির সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আহসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, রূপগঞ্জের ১২৮টি কেন্দ্রের ৮১৭টি কক্ষে এবার ভোট গ্রহণ হচ্ছে। নারী, পুরুষ ও হিজড়া মিলিয়ে আসনটির মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ জন।
নারায়ণগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য রূপগঞ্জে ৫ প্লাটুন করে সেনাবাহিনী ও বিজিবি, ৪ প্লাটুন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাবের দুটি টিম, পুলিশের ১৪টি মোবাইল টিম, ২টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ডিবির তিনটি টিম কাজ করছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলায় ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। ভোটারদের বাধা দেওয়ার কোনো ঘটনা এখনো চোখে পড়েনি।