‘দলের নেতা–কর্মীরা অতি উৎসাহী হয়ে মামলায় জড়িয়েছেন’

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়াছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অতি উৎসাহী হয়ে নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ইদ্রিস মিয়ার দেওয়া এই মন্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই ঘটনায় তাঁর অপসারণ চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মানববন্ধনও করেছেন বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, এক সাংবাদিকের মামলাসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ইদ্রিচ মিয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে একটিও মামলা নেই। ২০১৫ সালের পরে আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিল। আল্লাহর রহমতে তিনটি মামলা এর আগে (অন্তর্বর্তী সরকার আসার আগে) শেষ হয়ে গেছে। খালাস পেয়েছি। ২০১৮ সালের পরে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি নেতারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে মামলার আসামি হয়েছেন—এমন ইঙ্গিত করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদ্য মনোনীত আহ্বায়ক ইদ্রিচ মিয়া বলেন, ‘২০১৮ সালের পরে যাঁরা দায়িত্বশীল ছিলেন, তাঁরা অতি উৎসাহী হয়ে মামলায় জড়িত হয়েছেন।’

ইদ্রিস মিয়ার বক্তব্যের প্রতিবাদের বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিক্ষোভ। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সূত্র জানায়, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪২ হাজার ৮২৫টির বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৫০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৫।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী গায়েবি মামলার আসামি হয়েছেন। রাতে কেউ ঘরে থাকতে পারেননি। বিগত সময়ে যাঁরা রাস্তায় ছিলেন না, কোনো আন্দোলনে অংশ নেননি, মামলার আসামি হননি—তাঁরা কীভাবে সাধারণ নেতা-কর্মীদের দুঃখ বুঝবেন? দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে পুরো দলকে ইঙ্গিত করে দেওয়া এই বক্তব্যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’

এদিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়ার অপমানজনক মন্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘মামলা ও হামলায় নির্যাতিত পরিবারের’ দলটির নেতা-কর্মীরা ব্যানারে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে বিএনপির নির্যাতিত নেতারা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুর্নীতি অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা জেল–জুলুম–নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বিএনপিকে অন্তরে ধারণ করেছি বলে জেল-জুলুম খেটেছি। কিন্তু কয়েক দিন আগে যাঁরা আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পেয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘ ১৭ বছর আওয়ামী লীগের দালালি করেছেন। সেই আওয়ামী লীগের দালালি করা লোকজন এখন পদ–পদবি নিয়ে বিএনপিকেই অপমানিত করছে।’

মানববন্ধনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মামলা-হামলায় নির্যাতিত নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন গাজী আবু তাহের, মো. আবদুল মাবুদ, ইব্রাহিম সওদাগর, ইয়াসিন আরফাত, এস এম নয়ন, চৌধুরী হারুন, আলম খান, ওবায়দুল হক, মাকসুদুল হক প্রমুখ।

দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মন্তব্য সম্পর্কে জানতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ব্যস্ত আছেন বলা হয়। তবে তাঁর পক্ষ থেকে ফোন ধরা ব্যক্তিটি জানান, ইদ্রিস মিয়া নেতিবাচক অর্থে কোনো মন্তব্য করেননি। তাঁর মন্তব্যকে উল্টোভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কের মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমানের মুঠোফোনে আজ যোগাযোগ করা হয়। তবে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

গত রোববার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ইদ্রিস মিয়াকে আহ্বায়ক করা হয়। তিনি খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে দেশের বিতর্কিত এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে জানা গেছে। যার কারণে বিগত ১৫ বছরে মাত্র তিনটি মামলা ছিল তাঁর। যেখানে সাধারণ একজন নেতা-কর্মী ২০ থেকে ৩০ মামলার আসামি হয়েছিলেন।