প্রধান শিক্ষক নেই গাজীপুরের ১৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
সহকারী শিক্ষকেরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রশাসনিক কাজ করতে গিয়ে নিয়মিত ক্লাস নিতে পারেন না।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের চৌধুরীটেকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুবেদা আক্তার মারা গেছেন প্রায় এক বছর আগে। এর পর থেকেই পদটি শূন্য। একই অবস্থা উপজেলার শেওরাতলী বালক, আশাপুর ও কালিয়াকৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এ ছাড়া গাজীপুর সদর উপজেলার আতুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন তিনজন। পাঁচজনের কাজ তিনজনকেই করতে হচ্ছে। একই অবস্থা সদর উপজেলার বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুগরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বির্পবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিরুজালী আমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
ডুগরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক আসাদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। অনেক শিক্ষক তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। সেটিও দেখার কেউ নেই।
গাজীপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৭৭৬টি। প্রধান শিক্ষকের পদসংখ্যা ৭৭৪ ও সহকারী শিক্ষকের পদসংখ্যা ৭ হাজার ৪৬৩। ১৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় জানায়, সদর উপজেলায় ৩৪টি, কাপাসিয়ায় ৩০, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪৮, কালিয়াকৈর উপজেলায় ১৭ ও শ্রীপুর উপজেলায় ৩২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা।
কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষকেরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রশাসনিক কাজ করতে গিয়ে ক্লাসে নিয়মিত অংশ নিতে পারেন না। এতে বাকি শিক্ষকদের ওপর চাপ পড়ছে এবং কোনোমতে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। ফলে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি চলে যায় পিএসসির অধীন। নিয়োগ বিধিমালা, সহকারী শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতাসহ নানা কারণে পদোন্নতি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি শুরু হয়েছে। বর্তমানে সরকার বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
গাজীপুর শিক্ষক সমিতির নেতারা জানান, ৩ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্মীপুরে ২০১ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির আদেশ জারি করেছে। অন্যদিকে ২০১৯ সালে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়োগ বিধিমালা’ প্রণয়ন করা হয়। এ বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষকের ৬৫ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। তবে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া যাবে। সহকারী শিক্ষক হিসেবে কমপক্ষে সাত বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি বিবেচনায় আসবে।
বাঁশতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আলতাফ হোসেন বলেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পালন করেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধানেরা। উপজেলার যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, সেগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ দেওয়ার জরুরি।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির গাজীপুর শাখার সভাপতি দেওয়ান আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ছয়-সাত বছর ধরে সহকারী থেকে প্রধান শিক্ষক পদে কোনো পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। তাই এমন সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় অনেক সময় অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদানে ও সার্বিক কার্যক্রম চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।’