‘যারা আমাদের এতিম করে দিল, তাদের ফাঁসি চাই’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট কুমিল্লার মোগলটুলী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ (৬০)। তিনি হাসপাতালে ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার বাদ আসর জানাজা শেষে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কাজীরগাঁও গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
এর আগে পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা শেষবারের মতো আবুল কালাম আজাদকে দেখতে বাড়ির আঙিনায় ভিড় করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত আজাদের বড় মেয়ে নিশাত তাসনিম বলেন, ‘যারা আমাদের এতিম করে দিল, আমার তাদের ফাঁসি চাই, আর কিছু চাই না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ থেকে সম্প্রতি স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন নিশাত তাসনিম। বাবার স্বপ্ন পূরণে পেশাগত জীবন শুরু করার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।
নিশাত তাসনিম বলেন, ‘আমার বাবা গুলি খাওয়ার পর চার দিন পর্যন্ত হাসপাতালে জ্ঞান ছিল। বাবা বলে গেছেন, তাঁকে গুলি করা হয়েছে। বাবা আমাকে জানিয়েছেন, তিনি ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে শুধু বলেছিলেন, “তোমরা আন্দোলন করে যাও, দেশকে বাঁচাও। পরবর্তী সময়ে তোমরা কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে আমি তোমাদের সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেব।” আর এই ক্ষোভেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান ও তাঁর গ্যাং বাবার ওপর হামলা করে। খুব কাছ থেকেই রায়হান শটগান দিয়ে পেছন থেকে গুলি করে। এতে বাবার মেরুদণ্ডসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগে তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় একজন বাবাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান।’
পরিবার ও স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, অবস্থার অবনতি হলে আবুল কালাম আজাদকে কুমিল্লা থেকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে বুলেট বিদ্ধ হয়েছিল। একপর্যায়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিশাত তাসনিম বলেন, বাবার মৃত্যু তাঁরা দুই বোন ও তাঁদের মা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। বাবার শোকে মা কিছুক্ষণ পরপর অচেতন হয়ে পড়ছেন।
গতকাল বিকেলে কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. শরীফুল ইসলামসহ কয়েকজন আইনজীবী পূর্ব কাজীরগাঁও গ্রামে আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন। সেখানে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা শুরু থেকে আবুল কালাম আজাদের পাশে আছেন, থাকবেন এবং সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।
কুমিল্লার আরেক আইনজীবী মো. মোস্তফা জামান বলেন, আবুল কালাম আজাদ হত্যার ঘটনায় আইনজীবীরা বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চান তাঁরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক শাহাদাত হোসেন বলেন, যেহেতু নিহত আবুল কালাম আজাদের পরিবারের হাল ধরার জন্য কোনো ছেলে নেই, তাই এখন তাঁরাই তাঁর পরিবারের পাশে থাকবেন। তাঁর বড় মেয়ের চাকরির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন তাঁরা।