লক্ষ্মীপুরে পুলিশি পাহারায় সজিবের লাশ গ্রামের বাড়িতে, শহরে গায়েবানা জানাজা বিএনপির

লক্ষ্মীপুরে নিহত কৃষকদলের কর্মী সজিব হোসেনের লাশ না পেয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গায়েবানা জানাজা করেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর শহরের বাসভবন প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষে নিহত কৃষক দলের কর্মী মো. সজিব হোসেনের (৩০) লাশ পুলিশ ও র‍্যাবের পাহারায় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল থেকে পুলিশ ও র‍্যাবের পাঁচ থেকে ছয়টি গাড়ি পাহারা দিয়ে লাশটি নিয়ে যায়।

লাশ না পেয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা শহরে গায়েবানা জানাজা করেন। কেন্দ্রীয় বিএনপি প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর (এ্যানি) গোডাউন রোড এলাকার বাসভবন প্রাঙ্গণে এ গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নিহত সজিব চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষক দলের সদস্য ছিলেন। তাঁর বাড়ি চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।

গায়েবানা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. সাহাবুদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক হাছিবুর রহমানসহ অন্য নেতা-কর্মীরা।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কৃষক দলের কর্মী সজিবের জানাজার জন্য শহরে পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ তাঁর লাশ হাসপাতাল থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই দ্রুত গ্রামের বাড়িতে লাশ পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়। দলের একজন কর্মীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার পরও তাঁরা জানাজা পড়তে পারেননি। বিষয়টি দুঃখজনক।

তবে লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সজিবের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ।

সজিব হোসেন (৩০)
ছবি: সংগৃহীত

এর আগে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের ঝুমুর সিনেমা হল ও রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে দফায় দফায় পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে পুলিশ ও বিএনপির অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে সজিব হোসেন নিহত হন।

পুলিশ, বিএনপি ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বিকেল চারটার দিকে শহরের গোডাউন রোড এলাকার বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর বাসভবন থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের কাছে পদযাত্রায় বাধা দেয় পুলিশ। বাধা উপেক্ষা করে পদযাত্রা সামনের দিকে এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় জেলা শহরের ঝুমুর সিনেমা হল এলাকা, রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতাল, মটকা মসজিদ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

আরও পড়ুন

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ বাধা দেয়। নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলায় অংশ নেয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সজিবকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশের ছররা গুলিতে তাঁদের ৩০ থেকে ৪০ নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে তিনি দাবি করেন।

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক গতকাল মঙ্গলবার বলেন, বিএনপির উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা প্রথমে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। তাঁরা অতর্কিতে ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা-ভাঙচুর করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। সজিব কীভাবে মারা গেছেন, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন