কক্সবাজারের রামুতে বাঁকখালী নদীতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাসানো হয় পাঁচটি ‘স্বর্গ জাহাজ’। ২০০ বছরের পুরোনো এই উৎসবে অংশ নিতে নদীর দুই তীরে সমাগম ঘটে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্তত ১৫ হাজার মানুষের।
বেলা তিনটার দিকে জাহাজ ভাসানো উৎসবের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুকোমল বড়ুয়া। রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদ্যাপন কমিটির সভাপতি মিথুন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল।
আজ বেলা আড়াইটা থেকে বাঁকখালী নদীর পূর্ব রাজারকুল ঘাটে জড়ো হতে থাকেন ভক্তরা। বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাঁচটি জাহাজ আনা হয় নদীতে ভাসানোর জন্য। প্রথমে নদীতে ভাসানো হয় সিংহ আকৃতির একটি জাহাজ। তারপর ভাসানো হয় বৌদ্ধ প্যাগোডা, জাদি, হাঁস, ময়ূর ও হাতির আদলে তৈরি স্বর্গের জাহাজ। ভাসতে ভাসতে জাহাজগুলো ছুটছিল নদীর এদিক-সেদিক। বাঁশ, বেত ও রঙিন কাগজ দিয়ে তৈরি ‘স্বর্গের জাহাজ’ নৌকায় বেঁধে নদীতে ভাসানো হয়।
কমিটির সভাপতি মিথুন বড়ুয়া বলেন, প্রতিবছর তিন মাস ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত পালন শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার পরের দিন নদীতে জাহাজ ভাসানো উৎসবের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পূজা বড়ুয়া বলেন, ‘আগে চট্টগ্রামেই প্রবারণা উদ্যাপন করতাম। এবার বাঁকখালী এলাম স্বর্গের জাহাজ ভাসানো উৎসব দেখতে। জাহাজ ভাসানোর আনন্দ অসাধারণ।’
কলেজছাত্রী প্রেরণা বড়ুয়া বলেন, ‘এটি আমাদের প্রাণের উৎসব। এ উৎসব মূলত বৌদ্ধদের হলেও প্রতিবছর জাহাজ ভাসানো উৎসব ঘিরে রামুতে অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলায় পরিণত হয়।’
চিত্রশিল্পী ও শিক্ষক সংগীত বড়ুয়া বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমরা এ উৎসব উদ্যাপন করে আসছি। জাহাজ ভাসানোর প্রায় ১৫-২০ দিন আগে থেকে বৌদ্ধ গ্রামগুলোতে জাহাজ তৈরির আনন্দ শুরু হয়। বিশেষ করে গ্রামের শিশু-কিশোরেরা এ উদ্যোগ নিয়ে থাকে।’
উৎসব সম্পর্কে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ২০০ বছর আগে মিয়ানমারের মুরহনঘা এলাকায় একটি নদীতে সংঘরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম জাহাজ ভাসানো উৎসবের আয়োজন করেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের রামুতে এই উৎসব প্রচলন হয়। রামু ছাড়া দেশের কোথাও জাহাজ ভাসানো উৎসব হয় না।