দুই দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়, স্থবির জনজীবন
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টানা দুই দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। হাড়কাঁপানো শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে এই জনপদের মানুষের জীবন। রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে ভিজে যাচ্ছে পিচঢালা পথ। উত্তরের হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় কাবু হয়ে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে জানা গেছে, আজ শনিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় তেঁতুলিয়ায় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার পর দেখা মিলেছিল সূর্যের। ঝলমলে রোদ ওঠায় দিনের বেলা কিছুটা বেড়েছিল উষ্ণতা। এতে গতকাল বিকেলে তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত মঙ্গলবার থেকে তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়তে থাকে উত্তরের হিমেল বাতাসের দাপট। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে কুয়াশাও। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। গায়ে শীতের পোশাক জড়িয়ে কাজে যেতে দেখা গেছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের। আবার সকালে কেউ কেউ খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের কোনো এলাকায় ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা বিরাজ করলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, টানা দুই দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। এই এলাকার ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে আজ শনিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের দেখা মিলেছে। কিন্তু উত্তরের হিমেল বাতাস অব্যাহত থাকায় হালকা রোদেও শীত অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে টানা প্রায় এক মাসের কনকনে শীতে জেলার বিভিন্ন বাজারের পুরোনো শীতের কাপড়ের দোকানগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ শীত নিবারণ করতে পুরোনো গরম কাপড় কিনছেন। এ ছাড়া ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঠান্ডাজনিত এসব রোগ এড়াতে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাহানপাড়া এলাকায় সংস্কারের জন্য মাটি কাটার কাজ করছিলেন কয়েকজন নারী। শীতের প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁদের একজন জুলেখা বেগম (৪৩) বলেন, ‘সকালে যেলা (যখন) কাজোত আসি, কুয়াশাতে কিছু দেখা যায় না। মাটিখান বরফের মতো ঠান্ডা কচ্ছে। কিন্তু কাজকাম তো করে খাবায় নাগিবে। এইবার হামাক একটা কম্বল কেহ দিলেনাই। শীতখানোত হামার গরিবের কষ্ট বেশি।’
ভ্যানচালক মুজাহের আলী (৪৭) বলেন, ‘কুনঠে (কোথায়) তকা (থেকে) যে এই হিম বাতাসখান আচ্চে (আসতেছে)। হাতপাও ককোড়া করে দেছে। কান মাথাত মাফলাট বান্ধেও (মাফলার বেঁধেও) কুলা যায় না।’