‘ধর্মঘটে’ বাস বন্ধ, টার্মিনালে ক্রিকেট খেলছেন খুলনার পরিবহন শ্রমিকেরা
খুলনায় দুই দিনের ‘পরিবহন ধর্মঘটের’ কারণে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খুলনায় কোনো গাড়ি প্রবেশ ও খুলনা থেকে বিভিন্ন রুটে গাড়ি ছেড়ে না যাওয়ায় ইজিবাইক, ভ্যানে করে যাতায়াত করছেন অনেকেই। সেগুলোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন। এর মধ্যে আজ সকালে নগরের সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ক্রিকেট খেলছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। বিভিন্ন রুটের বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে।
শ্রমিকেরা জানান, বাস চলাচল বন্ধ। তাঁদের কোনো কাজ নেই, তাই তাঁরা ক্রিকেট খেলে সময় পার করছেন। অবসর পেলে মাঝেমধ্যেই তাঁরা এভাবে ক্রিকেট খেলেন।
পাইকগাছা রুটের সুপারভাইজার মো. জাহিদ হোসেন বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে দুই দলে ভাগ হয়ে খেলা করা হচ্ছে, যাঁরা হারবেন, তাঁরা দুপুরে খাওয়াবেন। দুই দলে মোট ২২ খেলোয়াড় আছেন।
এনা পরিবহনের সেলস এক্সিকিউটিভ মো. করিম বলেন, এভাবে খেলাধুলার সময় খুব কমই পাওয়া যায়। যখন পরিবহন বন্ধ থাকে, শুধু তখনই তাঁরা খেলতে পারেন।
ওই টার্মিনালের অন্তত পাঁচজন শ্রমিক বলেন, পরিবহন শ্রমিকেরা সাধারণত দিন হিসেবে মজুরি পান। সেটিও খুব কম। এক দিন গাড়ি বন্ধ থাকলে আর্থিক সংকটে ভুগতে হয়। তা সত্ত্বেও যেহেতু মালিকেরা বাস চলাচল বন্ধ করেছেন, তাই তাঁরা বাস চালাতে পারছেন না। অধিকাংশ শ্রমিকই বাস চলাচলের পক্ষে।
আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে খুলনায় দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ২৩ অক্টোবর সকাল ছয়টা থেকে গণপরিবহন চালু হবে। বিএনপির দাবি, আগামীকাল শনিবার খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ রয়েছে। ওই গণসমাবেশ বানচাল করতে ও বিপুল মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে ‘ষড়যন্ত্র’ করে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
গত বুধবার সকালে খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতির বৈঠকের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে নসিমন, করিমন, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক ও বিআরটিসির গাড়ি চলাচল করছে। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন যদি সড়কে ওই অবৈধ যান চলাচল ও কাউন্টার বন্ধ না করে, তাহলে পরবর্তী দুই দিন ২১ ও ২২ অক্টোবর মালিক সমিতির সব রুটের গাড়ি বন্ধ থাকবে।
খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি হলেন মো. মিজানুর রহমান। তিনি খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক। জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে শনিবার খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি। ইতিমধ্যে সমাবেশের অনুমতিও মিলেছে। খুলনা শহরের ডাকবাংলো ও ফেরিঘাট মোড়ের মাঝামাঝি সোনালী ব্যাংক চত্বরে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। বাধা সত্ত্বেও ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের সমাবেশের তুলনায় খুলনায় জনসমাগম বেশি হবে বলে আশা করছে বিএনপি।