লেবুর দেশেই লেবুর এত দাম?
লেবু জাতীয় ফসলের উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে সিলেটকে বলা হয় ‘লেবুর দেশ’। তবে উৎপাদন বেশি হলেও পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে এখন লেবুর দাম বহুগুণ বেড়েছে। নগরের একেক হাটে প্রতি হালি লেবু একেক দামে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, কোনো নজরদারি না থাকাতেই লেবুর দাম বেশি হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা বাজারে আকারভেদে প্রতি হালি লেবুর দাম পড়ছে ৩০ থেকে ১৪০ টাকা। অথচ একই লেবু গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ৭০ টাকায়। মূলত রোজা শুরু হতেই রোজদারদের অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম অন্যান্য বছরের মতো এবারও বাড়ল। তবে মৌসুম না থাকার কারণে লেবুর সরবরাহ কম হওয়াও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ বলে ব্যবসায়ীরা বলছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের টুকেরবাজার এলাকায় ছোট আকারের প্রতি হালি লেবু ৪০ টাকা, মাঝারি আকারের ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং বড় আকারের ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রায় ৪ কিলোমিটারের ব্যবধানে মদিনা মার্কেট এলাকায় ছোট আকারের ৫০ টাকা, মাঝারি আকারের ৮০ টাকা এবং বড় আকারের প্রতি হালি লেবু ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আরও বেশি দামের বড় লেবুও বাজারে আছে।
নগরের রিকাবিবাজার এলাকায় ছোট লেবু প্রতি হালি ৩০ টাকায়, মাঝারি লেবু ৭০ থেকে ৮০ টাকায় এবং বড় লেবু প্রতি হালি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নগরের বন্দরবাজার ও ব্রহ্মময়ী বাজারে প্রতি হালি ছোট লেবু ৪০ টাকা, মাঝারি লেবু ৬০ টাকা এবং বড় লেবু ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বন্দরবাজারের সবজি বিক্রেতা রহিম মিয়া বলেন, লেবুর মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে। ফলে বাজারে লেবু তুলনামূলকভাবে কম। এর মধ্যে আবার রমজান মাস। তাই কাটতিও বেশি। দুইয়ে মিলে যথারীতি লেবুর দাম বেড়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে লেবুর দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।
বেলা পৌনে চারটার দিকে রিকাবিবাজার এলাকায় সবজি কিনছিলেন আখলাক উদ্দিন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত সপ্তাহে যে লেবু ৬০ টাকা হালি কিনেছি, এখন একই লেবু ১২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেবুর দাম প্রতি হালিতে দ্বিগুণ বেড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সঠিকভাবে বাজার তদারকি করলে এভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর সাহস ব্যবসায়ীরা করতে পারতেন না।’
এদিকে সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় চলতি বছর ৪০৫ হেক্টর জমিতে লেবুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হেক্টরে সিডলেস লেবু (বারো মাস উৎপাদন হয়), ৫৫ হেক্টরে কাগজি লেবু এবং ৩২৫ হেক্টরে স্থানীয় লেবু চাষাবাদ হয়। এবার লেবুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন।
সিলেটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, লেবুর মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে। জেলায় কী পরিমাণ লেবু উৎপাদন হয়েছে, তা আগামী জুন মাসে মৌসুম শেষে জানা যাবে। যেহেতু এখন নতুন লেবুর বাজারজাত কেবল শুরু হয়েছে, তাই পাইকারি বাজারেও দাম এখন তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি।
যোগাযোগ করলে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রমজান মাসে বাজার তদারকি করতে পাঁচটি দল গঠন করা হয়েছে। কেউ যেন অন্যায্যভাবে পণ্যের দাম বাড়াতে না পারেন, সেটা ওই দলগুলো দেখবে। একইভাবে লেবুর দাম বাড়ার বিষয়টিও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।