‘মিনিকেট’ চাল বিতর্ককে গভীর যড়যন্ত্র বলছেন চালকল মালিকেরা
সম্প্রতি ‘মিনিকেট’ চাল নিয়ে ওঠা বিতর্ককে চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে ‘গভীর যড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করেছে নওগাঁ জেলা অটোমেটিক রাইস মিল মালিক সমিতি ও ধান্য-চাউল আড়তদার সমিতি। দেশীয় চালকলশিল্প ধ্বংস করতে এবং চালকল মালিকদের হেয় করতে বিভিন্ন মহল থেকে অবৈজ্ঞানিক ও বাস্তবতাবিবর্জিত কথা বলা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা একটায় নওগাঁ ধান্য-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় চালকল মালিকেরা এ অভিযোগ করেন। নওগাঁ জেলা অটোমেটিক রাইস মিল মালিক সমিতি এবং ধান্য-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতি যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার কারণে গোটা উত্তরাঞ্চলে ইদানীং ব্যাপকভাবে জিরাশাইল ধানের চাষ হচ্ছে। এই জিরাশাইল ধানই দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের কৃষকেরা মিনিকেট নামে বাজারে বিক্রি করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নওগাঁ ধান্য-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা ওরফে চন্দন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা অটোমেটিক রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বেলকন গ্রুপের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সম্প্রতি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে উচ্চপর্যায়ের আমলারা বলছেন, মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই। অথচ তাঁরা বলছেন না, মিনিকেট নামে বাজারে প্রচলিত চাল কোন ধান থেকে উৎপাদিত। অথচ এ বিতর্ক ওঠার আগে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বাজারে কমবেশি মিনিকেট চাল ছিল।
লিখিত বক্তব্যে ধান্য-চাউল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা বলেন, তাঁরা উত্তরাঞ্চলের নাটোর, নন্দীগ্রাম, সিংড়া, রনবাঘা, চৌবাড়িয়া ও কুষ্টিয়ার কৃষকদের কাছ থেকে মিনিকেট ধান কিনছেন। তাহলে এটা কোন ধান? বিষয়টি স্পষ্ট করা হচ্ছে না। অথচ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, মেশিনে চাল ছাঁটাই বা পলিশ করে চাল ছোট বা লম্বা করা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো—দেশের কোনো চালকলে চাল ছাঁটাই বা লম্বা করার কোনো মেশিন নেই।
নিরোদ বরণ সাহা আরও বলেন, পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার কারণে গোটা উত্তরাঞ্চলে ইদানীং ব্যাপকভাবে জিরাশাইল ধানের চাষ হচ্ছে। এই জিরাশাইল ধানই দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের কৃষকেরা মিনিকেট নামে বাজারে বিক্রি করছেন। এ জন্য জিরাশাইল ধান থেকে উৎপাদিত চাল কোথাও মিনিকেট আবার কোথাও জিরাশাইল নামে বিক্রি করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, মিনিকেট চালের মতো ৫০ বছর ধরে নাজির নামে এক ধরনের চাল বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেটের মতো নাজিরও একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নাজির নামে কোনো ধান নেই। চালকলে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের ধানের একসিদ্ধ চালকে নাজির বলা হয়। যেমন—কাটারি ধানের এক সেদ্ধ চাল কাটারি নাজির, পাইজামের এক সেদ্ধ চালকে পাইজাম নাজির, বিআর-২৮ ধানের এক সেদ্ধ চাল আটাশ নাজির বলা হয়। কিন্তু বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের কেউ বলেন না, পাইজাম নাজির, আটাশ নাজির, কাটারি নাজির চাই। তাঁরা নাজির চাল চান। বাজারে প্রচলিত নাজির চালের জন্য তো চাল ব্যবসায়ী বা চালকল মালিকেরা দায়ী নন।
নিরোদ বরণ সাহা আরও বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ কৃষক সুগন্ধী ধান হিসেবে ব্রি-৩৪ ধানের আবাদ করছেন। অথচ বাজারে সেই ধানের চাল চিনিগুঁড়া হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। অথচ বিজ্ঞ ব্যক্তিরা কিন্তু চিনিগুঁড়া চাল নিয়ে কোনো কথা বলছেন না। তাহলে কি নাজির ও মিনিকেট চাল নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে?
নিরোদ বরণ সাহা অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি মিনিকেট ও নাজির চাল নিয়ে যে ধরনের বক্তব্য ও সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে, তাতে চাল ব্যবসায়ীদের হেয় করা হয়েছে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘নওগাঁয় চাল কেটে তৈরি হচ্ছে মিনিকেট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ওই সংবাদের তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বিভ্রান্তিমূলক এবং বাস্তবতাবর্জিত। বাস্তবতা হলো, চাল কেটে ছোট বা লম্বা করার কোনো মেশিনই এখনো আবিষ্কার হয়নি। চাল ভেঙে খুদ করা যেতে পারে। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের ফলে নওগাঁর চাল ব্যবসার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে। ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।
চালকল মালিক বেলাল হোসেন বলেন, ‘বলা হচ্ছে, বিভিন্ন জাতের ধানের চাল কেটে নাকি মিনিকেট চাল বানানো হয়। আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে আমার মিলে স্বাগত জানাই, আমার মিলে যে মিনিকেট চাল উৎপন্ন হয়, সেটি মেশিন দিয়ে ছোট বা লম্বা করা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য। আগেও ১০ বার এই পরীক্ষা দিয়েছি। আবার পরীক্ষা দিতে রাজি আছি।’