৭ মাস পর কক্সবাজার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ গেল সেন্ট মার্টিনে
প্রায় সাত মাস পর কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শহরের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ৭৫০ জন পর্যটক নিয়ে এমভি কর্ণফুলী নামে ওই জাহাজ ছেড়ে যায়।
তবে পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজার থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হলেও টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের জাহাজ চলাচল বন্ধ আছে। ওই রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধের বিষয়ে নাফ নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠায় নাব্যতা–সংকটের কথা বলেছে কর্তৃপক্ষ।
টানা চার দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এখন লাখো পর্যটকের ভিড়। হোটেলমালিক ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) নেতাদের ভাষ্য, সৈকত ভ্রমণে আসা ৭০ শতাংশ পর্যটকের চাহিদায় থাকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ। টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকেরা প্রবাল দ্বীপটিতে যেতে পারছেন না। কক্সবাজার থেকে প্রমোদতরি এমভি কর্ণফুলীতে করে সেন্ট মার্টিনে গেলেও তাতে খরচ পড়ছে বেশি। তা ছাড়া মাত্র ৭৫০ জন যেতে পারায় টিকিট পাওয়া নিয়েও বিপাকে পড়তে হয়েছে পর্যটকদের।
এমভি কর্ণফুলীর স্থানীয় পরিচালক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাতটার দিকে জাহাজটি সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পৌঁছেছে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সেখানে থাকা পর্যটকদের নিয়ে জাহাজটি পুনরায় কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেবে।
আজ সকালে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শত শত পর্যটকের ভিড়। শহর থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় পর্যটকেরা ইজিবাইক, অটোরিকশা নিয়ে হোটেল থেকে ঘাটে পৌঁছে জাহাজে ওঠার চেষ্টা করেন। এমভি কর্ণফুলী জাহাজে কেবিন আছে ১৭টি। কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন আসা-যাওয়ার বিপরীতে সেগুলোতে ভাড়া গুনতে হয় ১০ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর চেয়ার বসে গেলে ভাড়া পড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। জাহাজে চেয়ার আছে ৭৩০টির মতো।
রাজশাহী থেকে আরও চার বন্ধুর সঙ্গে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন ব্যবসায়ী আকমল হোসেন (৪৫)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ দিনের জন্য কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন তাঁরা। দুজন জাহাজে করে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন। টিকিট না পেয়ে তিনজন মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফের দিকে রওনা দিয়েছেন। সেন্ট মার্টিন যাতায়াতের পর্যাপ্ত জাহাজ না থাকায় যাত্রীদের অনেকে হতাশ বলে জানান তিনি।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাত মাস বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার পর্যটকের পদচারণ শুরু হচ্ছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। পর্যটকের রাত্রিযাপনের জন্য দ্বীপে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট আছে ১২০টির বেশি। রেস্তোরাঁ আছে ৫০টির মতো। সব কটি প্রস্তুত আছে।
জাহাজমালিকদের সংগঠন ‘সি-ক্রোজ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ’–এর (স্কোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, দুই মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফের ওপারে রাখাইন রাজ্য। নাফ নদী দুই দেশের সীমারেখা ভাগ করে দিয়েছে। নাফ নদী হয়েই প্রতিবছর ১০টির বেশি পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করে। গোলাগুলি কিংবা মর্টার শেল জাহাজে এসে পড়লে প্রাণহানির শঙ্কা থাকে। তা ছাড়া নাফ নদীর বদরমোকামসহ বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক ডুবোচর জেগে উঠেছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে আপাতত পর্যটকবাহী জাহাজ বন্ধ থাকবে। জাহাজমালিকেরা সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। কারণ, ঝুঁকি নিয়ে জাহাজ চলাচল অনুচিত।
জাহাজমালিকেরা বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তে টেকনাফের পরিবর্তে এবার কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করছে। ১৫ অক্টোবর থেকে এ ঘাটে যুক্ত হচ্ছে ৫৫০ জন ধারণক্ষমতার আরেকটি জাহাজ এমভি বারআউলিয়া। আগামী ৩ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকতের ১৫ নম্বর ওয়াটার টার্মিনাল থেকে ছাড়বে ১ হাজার ৫০০ জন ধারণক্ষমতার অত্যাধুনিক জাহাজ বে-ওয়ান।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের নাফ নদীর মোহনা ও মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় একাধিক ডুবোচর জেগে ওঠায় নাব্যতা–সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময় পর্যটক নিয়ে জাহাজ ডুবোচরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। ডুবোচরে আটকা পড়ে গত এপ্রিল ও মে মাসে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা সাতটির বেশি কাঠভর্তি ট্রলার ডুবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। সব দিক বিবেচনা করে এবার টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।