তেঁতুলিয়ায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, টানা ছয় দিন বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইলেও সকাল থেকে ঝলমলে রোদ। খেতের কাজে নেমেছেন শ্রমজীবী মানুষ। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় পঞ্চগড় পৌরসভার তুলারডাঙ্গা এলাকায়ছবি: রাজিউর রহমান

পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে টানা ছয় দিন ধরে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে এই কয় দিন দিনের বেলা ঝলমলে রোদ থাকায় দিন ও রাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে। এতে দিনের চেয়ে রাতে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশা না থাকায় আর মেঘমুক্ত আকাশে সকাল সকাল সূর্য উঠে দিনভর তাপ ছড়াচ্ছে। এতে স্বস্তিতে আছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যাবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় তেঁতুলিয়ায় বাতাসে আদ্রতা ছিল ৭৭ শতাংশ। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার।

এর আগে গত শুক্রবার থেকে উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে শুরু হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ওই দিন সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল চলতি মৌসূমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শুক্রবার থেকে ছয় দিন ধরেই তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।

আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য, কোনো এলাকার দিনের সর্বনিম্ন তাপামাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ওই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।

আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশা না থাকায় সকাল সকাল দেখা মিলেছে ঝলমলে রোদের। উত্তরের ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাসে অনুভূত হচ্ছে শীত। গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন সাধারণ মানুষ। কৃষকেরা গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে বাজারে নেওয়ার জন্য খেত থেকে সংগ্রহ করছেন শাকসবজি। কেউ জমিতে করছেন হালচাষ, আবার কেউবা বুনছেন নানা ফসলের বীজ। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের তীব্রতা বাড়ায় বেশ স্বস্তিতে কৃষিজমিতে কাজ করতে দেখা গেছে কৃষক ও শ্রমিকদের।

আরও পড়ুন
বাজারে বিক্রির জন্য সকালে খেত থেকে কপি সংগ্রহ করা হচ্ছে। আজ বুধবার পঞ্চগড় পৌরসভার তুলারডাঙ্গা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সকাল সাড়ে আটটার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার তুলারডাঙ্গা এলাকায় বাজারে বিক্রির জন্য খেত থেকে ফুলকপি সংগ্রহ করছেন কৃষক আবু সাঈদ (৪৪)। তিনি বলেন, ‘কয় দিন থেকে রাতিত বেশি ঠান্ডা (শীত), দিনোত ঠান্ডা কম। সকালে যেলা খেতোত আসি, ঠান্ডাতে হা-পাও ককোড়া হচে। আর এ্যাল বেলা উঠার পর ভালয় রোদ উঠিচে। এই রকম রোদ হইলে কাজকাম করে আরাম আছে।’

জেলা শহরের রিকশাচালক মো. বয়জদ্দিন (৫০) বলেন, ‘বর্তমানে দিনের বেলা ঠান্ডা কম, কিন্তু সন্ধ্যা হইলে ঠান্ডাখানোত বাহিরোত রহা (থাকা) যায় না। সারা রাতি শিল শিল বাতাসখান খুপে ঠান্ডা কচ্ছে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার থেকে টানা ছয় দিন পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে। আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে গেছে। সেই সঙ্গে সকাল সকাল কুয়াশা কেটে গিয়ে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। হিমালয়ের হিম বায়ু সরাসরি এই এলাকায় প্রবেশ করায় রাতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। তবে দিনের বেলা রোদের তীব্রতা থাকায় দিন ও রাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। দিনের ঝলমলে রোদে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি থাকছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে এই এলাকার আকাশে মেঘ জমতে পারে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন