ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মিরাজুলের মরদেহ ৯৬ দিন পর উত্তোলন
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মিরাজুল ইসলামের (২১) মরদেহ দাফন করার ৯৬ দিন পর ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বারোঘরিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে মরদেহটি তোলা হয়।
এ সময় লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) এ কে এম ফজলুল হক, আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নূরে আলম সিদ্দিকী, আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সানাউল হক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও মিরাজুলের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মিরাজুলের মরদেহ গত ৮ আগস্ট রাতে পারিবারিক ওই কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি মহিষখোচা বারোঘরিয়া গ্রামের মো. আবদুস সালামের ছেলে। গত ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে মিছিলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২৪ আগস্ট মিরাজুলের বাবা আবদুস সালাম বাদী হয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার, মিরাজুলের পরিবার ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, মিরাজুল আদিতমারীর মহিষখোচা বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে একটি মুঠোফোনের দোকানে কর্মচারীর চাকরি নেন।
যাত্রাবাড়ীতে ৫ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে মিছিলে যোগ দেন মিরাজুল। সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উড়ালসড়কের নিচে মাছের আড়তের সামনে মিরাজুল গুলিবিদ্ধ হন। এরপর অপরিচিত লোকজন ঘটনাস্থল থেকে মিরাজুলকে উদ্ধার করে প্রথমে বেসরকারি ডেলটা মেডিকেল কলেজে নেন। সেখানে দীর্ঘক্ষণ থাকার পর চিকিৎসা না পাওয়ায় ছাত্র-জনতা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও চিকিৎসার ব্যবস্থা না হলে মিরাজুলকে ৭ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করান পরিবারের লোকজন। সেখানে ৭ আগস্ট রাতে মিরাজুলের পেটের ভেতর থেকে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে একটি বুলেট বের করেন। অবস্থা গুরুতর হলে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিরাজুল ৮ আগস্ট সকাল ১০টায় মারা যান। ওই দিন রাত ৯টার দিকে গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে মিরাজুলের মরদেহ দাফন করা হয়।
মামলার এজাহারে লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য (এমপি) ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন, লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের তৎকালীন এমপি ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, লালমনিরহাট-৩ সদর আসনের তৎকালীন এমপি ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মতিয়ার রহমান, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ও লালমনিরহাট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফুরা বেগমসহ মোট ৩৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) কাওসার হোসেন বলেন, নিহত মিরাজুল ইসলামের বাবা আবদুস সালামের দায়ের করা হত্যা মামলার প্রেক্ষাপটে আইনি বাধ্যবাধকতা ও আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য মিরাজুলের মরদেহ কবর থেকে তোলা হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে পুনরায় হস্তান্তর করা হবে।