রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর দুই বিভাগের ক্লাস–পরীক্ষা ও ফুটবল টুর্নামেন্ট স্থগিত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লেজিং (কটু কথা) করাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর আন্তবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সংঘর্ষে জড়ানো আইন বিভাগ ও মার্কেটিং বিভাগের ক্লাস–পরীক্ষা আগামীকাল মঙ্গলবার স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী মিলিয়ে অন্তত ৩৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আজ সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়াম এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। যার জের ধরে পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে আইন বিভাগে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় রাত সাড়ে আটটার দিকে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত হয়।
পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত ৯টার দিকে জরুরি সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্তবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামীকাল দুই বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে কাল দুই বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে আন্তবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের রাউন্ড-১৬–তে মার্কেটিং ও আইন বিভাগ মুখোমুখি হয়। খেলায় মার্কেটিং বিভাগ ১-০ গোলে জয়ী হয়। খেলা চলাকালে উভয় পক্ষের দর্শকেরা স্টেডিয়ামে অবস্থান করছিলেন। গোল হওয়ার এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ একে অপরকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিলে বাগ্বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। খেলা শেষে স্টেডিয়াম গেটে আইন ও মার্কেটিং বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এ সময় উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরা একে অপরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় আইন বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুর রহমান মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে আহত হন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করেন। ওই মিছিলের ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিক আবু সালেহকে মারধর করে মুঠোফোনের ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক মাফরুহা সিদ্দিকী লিপি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে।’ এ ছাড়া এ ঘটনায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শংকর কুমার বিশ্বাস।
এদিকে বিকেলের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে মার্কেটিং বিভাগ ও পেছনের ফটকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন। এতে পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
একপর্যায়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবন ও আইন বিভাগে ভাঙচুর চালান। পরে রাত আটটার দিকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরাও ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাঈদা আঞ্জু কথা বলতে রাজি হননি। অন্যদিকে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নুরুজ্জামানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘খেলাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’