তারাগঞ্জে মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার মেনানগর নুরুল হুদা মোজাদ্দেদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সুপার ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ–বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চারটি পদে নিয়োগে তাঁরা ৭৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। এই অভিযোগে মাদ্রাসার সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের নয়া মাদ্রাসা এলাকায় মেনানগর নুরুল হুদা মোজাদ্দেদিয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৫ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে মাদ্রাসাটিতে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ১৮ জন। এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫০।
স্থানীয় ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসানুল হক চৌধুরী (ডিউক) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হন হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাদেক আলী সরকার। এর পর থেকে মাদ্রাসাটিতে নানা অনিয়ম–দুর্নীতি শুরু হয়। জানুয়ারি মাসে গোপনে দেয়াল বা আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে ৭৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে অফিস সহকারী রহিমা বেগম, আয়া শরিফা খাতুন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সফিকুল ইসলাম ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে রব্বানী মিলনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এলে এ ঘটনার বিচার চেয়ে এবং মাদ্রাসায় শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে এলাকাবাসী গত ১ সেপ্টেম্বর এলাকায় বিক্ষোভ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
ওই লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও গত ১ অক্টোবর মাদ্রাসার সুপার আইয়ুব আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন। কমিটিতে আহ্বায়ক হলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হক।
জানতে চাইলে গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে মাহমুদুল হক জানান, তিনি তারাগঞ্জের পাশাপাশি মিঠাপুকুর উপজেলারও দায়িত্বে আছেন। ভাতার কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। তবে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে মাদ্রাসার সাবেক সুপার আইয়ুব আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার। আমাকে জিম্মি করে বন্দুকের নল দেখিয়ে সাবেক সভাপতি ছাদেক আলী নিয়োগগুলো দিয়েছে। টাকাপয়সার বিষয়টি আমাকে গোপন করেছে। তবে যত দূর জানি, চারজনের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকার মতো নিয়েছে। এই টাকা এমপি ডিউক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ছাদেক আলী ভাগ করে নিয়েছে।’
মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি ছাদেক আলী সরকার বলেন, ‘মাদ্রাসার চার পদে নিয়োগে একটি টাকাও কারও কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। সব নিয়োগ নিয়ম-নীতি মেনে হয়েছে। সুপার নিজের অনিয়ম ঢাকতে এসব মিথ্যা কথা বলছে।’
মাদ্রাসার দাতা সদস্য সুলতান মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘এই মাদ্রাসার জমিদাতা আমি। আমার ছেলেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সভাপতি ছাদেক মাস্টার দুই লাখ আর সুপার আইয়ুব আলী ৫০ হাজার টাকা নিছে। কিন্তু ছেলের চাকরি হয় নাই। ১৫ থাকি ২০ লাখ টাকা যারা দিছে, তাদের চাকরি হইছে। আর কবে, কীভাবে নিয়োগ হয়েছে, এলাকার কেউ জানি না। এখনো টাকা ফেরত পাইনি। শুধু আমি নই; সভাপতি, আওয়ামী লীগের নেতা ও সুপার অনেক মানুষের কাছে চাকরির কথা বলে টাকা নিছে।’
এ বিষয়ে ইউএনও রুবেল রানা বলেন, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাদ্রাসার সুপার আইয়ুব আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।