রাখাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় গোলাগুলির শব্দ আসেনি, তবু এপারে শঙ্কা
বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় গোলাগুলির কোনো শব্দ পাননি এপারের বাসিন্দারা। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা গোলাগুলি না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন। তবে যেকোনো মুহূর্তে ওপার থেকে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরুর শঙ্কা রয়েই গেছে।
সীমান্তের সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সীমান্তচৌকি দখল-পুনরুদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ)। রাতে আরাকান আর্মির দখলে থাকা সীমান্তচৌকি পুনরুদ্ধারে হেলিকপ্টারে করে মর্টার শেল ও গুলি ছোড়ে সরকারি বাহিনী। শক্তি ও উপস্থিতি জানান দিতে গুলি ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয় আরাকান আর্মিও।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত আছে ২৭৩ কিলোমিটার। প্রতিবেশী দেশটি থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকা ও নাফ নদীতে টহল দিচ্ছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের সদস্যেরা।
মিয়ানমার সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক শ ফুট দূরত্বে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া গ্রাম। ১২০ ফুট প্রস্থের ছোট নাফ নদী দুই দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। রাখাইনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই গ্রামের মানুষ। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নাফ নদীর তীরের জমিতে চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন চাষাবাদ বন্ধ রাখা হয়েছে।
উলুবনিয়া গ্রামের চিংড়িচাষি হারুন অর রশিদ সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, সর্বশেষ গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাখাইন রাজ্যের নাইচাডং, বালুখালী, ডাবফাঁড়ি ও তোতারদিয়া এলাকায় গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে হেলিকপ্টার উড়তে দেখেছেন তাঁরা। এপার থেকে আগুনের কুণ্ডলী ও কালো ধোঁয়া দেখা গেছে। কিন্তু আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওপার থেকে গোলাগুলির কোনো শব্দ আসেনি।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যের তুমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্প এলাকায় বিজিপির তিনটি চৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর প্রায় ১০ দিন গোলাগুলি বন্ধ ছিল। তবে গত শনিবার হঠাৎ ওপারে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরু হয়। গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি, জলপাইতলী, পোস্ট ক্যাম্প, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, পশ্চিমকুল, হেডম্যানপাড়ার মানুষ গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। কিন্তু এর পর থেকে চুপচাপ দুই পক্ষ। আজ এপারে গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও লোকজনের মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এক মাস ধরে ওপারে (রাখাইনে) গোলাগুলি-মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেই চলেছে। গোলাগুলি কখন বন্ধ হয়, কখন শুরু হয়, ঠিকঠিকানা নেই। মধ্যখানে বাংলাদেশের সীমান্তের জনপদের হাজারো মানুষ সংকটের মধ্যে সময় পার করছে।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, রাখাইনে এখন দুই পক্ষের মধ্যে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই চলছে। আরাকান আর্মি কিছুদিন আগে যেসব সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে, এখন সেসব চৌকি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে মিয়ানমার সরকারি বাহিনী।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিপরীতে মিয়ানমারের মংডু শহরের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা। গতকাল দুপুর থেকে সেখানেও গোলাগুলি হয়নি বলে জানিয়েছেন সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, অন্যান্য এলাকার তুলনায় মংডুর দক্ষিণাংশের পরিস্থিতি শান্ত আছে। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সেন্ট মার্টিন সাগরে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিজিবি তৎপর আছে।
রাখাইন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের তৎপর রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত অনুপ্রবেশকালে ৩ দফায় ৭৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।