স্ত্রীকে শ্বাসরোধে ও মেয়েকে বালতির পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেন জেবিন দেব

গ্রেপ্তার জেবিন দেব
ছবি : সংগৃহীত

পরিকল্পিতভাবে ১৪ ফেব্রুয়ারি স্ত্রী ও তিন মেয়ে সন্তান নিয়ে কক্সবাজার সৈকতের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টের সি আলিফ হোটেলে ওঠেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার জেবিন দেব (৪০)। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৬ ফেব্রুয়ারি হোটেল কক্ষে প্রথমে স্ত্রী সোমা দেকে (৩৫) শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। এরপর হোটেলের বাথরুমের বালতির পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেন আট মাস বয়সী মেয়ে শিশু অনামিকা দেবকে।

গ্রেপ্তারের পর কক্সবাজারের পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ড নিয়ে এসব তথ্য দিয়েছেন জেবিন দেব। তিনি বাঁশখালীর বৈলগাঁও বানীগ্রামের দুলাল দেবের ছেলে। এ বিষয়ে শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম।

ওসি মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছোট মেয়ে অনামিকার জন্ম নিয়ে স্ত্রীকে সন্দেহ করে আসছিলেন জেবিন। এটা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এ কারণে মা ও মেয়েকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। কয়েক দিন আগে জেবিন কক্সবাজারে এসে হত্যার পরিকল্পনা করে যান। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে কক্সবাজারে আসেন।

পুলিশ জানায়, গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের সি আলিফ হোটেলের ৪১১ নম্বর কক্ষ থেকে মা সোমা দে ও মেয়ে অনামিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর অপর দুই মেয়েকে নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন জেবিন দেব। তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে গতকাল রাতে চট্টগ্রাম মহানগরের বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতুসংলগ্ন একটি বাস কাউন্টার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বাকলিয়া থানার ওসি আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেবিনকে একটি বাস কাউন্টার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জেবিন দেবের স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী ও মেয়ে অনামিকাকে হোটেল কক্ষে রেখে অপর দুই মেয়ে দীপান্বিতা ও জিতুকে নিয়ে বাইরে যান জেবিন। কিছুক্ষণ পর দুই মেয়েকে হোটেলের লবিতে রেখে নিজেদের কক্ষে যান। এ সময় প্রথমে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে এবং পরে মেয়েকে বালতির পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেন তিনি। এরপর লাশ দুটি হোটেল থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে স্ত্রীর লাশ দুই খাটের মাঝখানে মেঝেতে ফেলে রাখেন। আর শিশুটির লাশ খাটের ওপর শুইয়ে রেখে কক্ষের দরজা লাগিয়ে লবিতে অপেক্ষমাণ দুই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।

আরও পড়ুন

নিহত সোমা দে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর নাথপুরা গ্রামের শচীন্দ্র দের মেয়ে। ২০০৯ সালে জেবিন দেবের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের পর থেকে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করছিলেন জেবিন। তিন মাস আগে তিনি ওমানে চলে যান। বিদেশে কাজের চাপ বেশি হওয়ায় ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে আসেন তিনি।

পুলিশ জানায়, আজ বিকেলে নিহত সোমা দের মামা প্রিয়রঞ্জন দে বাদী হয়ে জেবিন দেবের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে মা ও মেয়ের মরদেহ বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল রোববার সকালে জেবিন দেবকে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।