জামিন হয়নি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের, শুনানিতে আসামিপক্ষের ১১ আইনজীবী

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীফাইল ছবি

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, চিন্ময়ের জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন শুনানি হয়। আজ সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম আদালতে
সৌরভ দাশ

শুনানিতে চিন্ময়ের পক্ষে ১১ আইনজীবী অংশ নেন। তাঁরা আদালতকে বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চিন্ময় দাসকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। চিন্ময়ের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য্য শুনানি শেষে প্রথম আলোকে বলেন, নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।

এদিকে চিন্ময়ের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আইনজীবী আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কাউকে আদালত ভবনে প্রবেশ করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ হয়। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ওই দিনই কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন জামিন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আদালত ৩ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য রাখেন। সেদিন চিন্ময়ের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আদালত ২ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য রাখেন। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের সভাপতি রবীন্দ্র ঘোষ জামিন আবেদনের শুনানি করতে আবেদন করেন গত ১১ ডিসেম্বর। কিন্তু তার কাছে ওকালতনামা না থাকায় সেদিনও শুনানি হয়নি।

গত ৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুনানি শেষে সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনজীবীরা। আজ সকালে চট্টগ্রাম আদালতে
সৌরভ দাশ

২৬ নভেম্বর চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আইনজীবী সাইফুল মারা যান। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল হত্যার ১০ আসামির মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য সম্প্রতি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।