ওএমএসের দোকানে ভিড়, খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককে
নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস বাড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে (ওএমএস) পণ্য কিনতে লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এতে অনেক লোক দীর্ঘ অপেক্ষার পরও পণ্য কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবার পৌর এলাকার নয়াগোলাহাট এলাকায় দেখা যায় এমন চিত্র।
কোলে শিশুসন্তান নিয়ে সকাল আটটা থেকে ওএমএসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন নায়েমা বেগম (২৬)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলাহাটে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হয়, তখন দুপুর দেড়টা। ভীষণ হতাশা নিয়ে বললেন, ‘যতগুলো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, তাতে আমার পাওয়ার সুযোগ নেই। আমার জন্য একটু বলেন, যেন পাই। দুধের শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা টনটন করছে।’
ওই সময় ওএমএসে চাল-আটা নেওয়ার সুযোগ পাওয়া রুমালী বেগম নামের ষাটোর্ধ্ব নারী বলেন, ‘মহানন্দা লোদী (নদী) পার হয়্যা অ্যাসাছি ফজর ওকতে, আর পাইনু অ্যাতক্ষুণে। তাহিলেই বুঝো, হামারঘে কী কষ্ট।’
নায়েমা বেগমের সমস্যার কথা জানাতেই দোকানের কর্মচারী কাশেম বলেন, ‘আমাদের করার কিছু নাই। লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের সামনে থেকে দেওয়া হয়। না পাওয়া মানুষ অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হয়। আজও অনেকে ফিরে যাবেন। এখানে পৌর এলাকার বাইরে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। কোনো দিন পান, কোনো দিন পান না।’
লাইনের বাইরে ক্লান্ত হয়ে বসে থাকা আরেক নারী নূরজাহান বেগম (৫৮) এসেছেন ছয়-সাত কিলোমিটার দূরের বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে। তিনি বলেন, এর আগের দিনও তিনি খালি হাতে ফিরে গেছেন। আজও পাবেন কি না, নিশ্চয়তা নেই।
কাছাকাছি বয়সের একই ইউনিয়নের তাহিরপুর গ্রামের গিনি বেগমসহ আরও কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখা যায়। সবার চেহারায় ক্লান্তি আর হতাশার ছাপ। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন জানান, প্রতিবারই এখান থেকে ৩০ থেকে ৫০ জন মানুষ মনে কষ্ট নিয়ে খালি হাতে ফিরে যান।
অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও ফিরে যাওয়ার বিষয়টি ডিলার আবুল কাশেমও প্রথম আলোর কাছে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার দোকানটি পৌর এলাকার এক প্রান্তে। এ এলাকাতেই অনেক গরিব মানুষ। তাঁরাই পান না। কিন্তু পার্শ্ববর্তী বালিয়াডাঙ্গা ও ঝিলিম এবং দূরের গোবরাতলা ইউনিয়েন থেকেও লোকজন কম দামে (৩০ টাকা কেজি চাল ও ২৪ টাকা কেজি আটা) চাল-আটা কিনতে আসেন। আমাদের করার কিছু নেই। লাইনে যাঁরা দাঁড়াবেন, মাল থাকা পর্যন্ত তাঁদের দিতে হবে। প্রতিবার বরাদ্দ দেওয়া হয় এক হাজার কেজি চাল ও এক হাজার কেজি আটা। ২০০ জনের মধ্যে তা দেওয়া হয়। সম্প্রতি ৫০০ কেজি আটা বরাদ্দ বাড়িয়েছে। তা দেওয়া হচ্ছে আরও ১০০ জনকে।’