উদ্বৃত্ত থাকার পরও চামড়া সংরক্ষণ ঘিরে বাড়ছে লবণের দাম
এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কক্সবাজার থেকে লবণ সংগ্রহের ধুম পড়েছে। এ কারণে স্থানীয় বাজারে লবণের দাম বাড়ছে। তবে লবণের সংকট হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কর্তৃপক্ষ।
আগামী বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিসিকের তথ্যমতে, এবার সারা দেশে কোরবানির জন্য ১ কোটি ২১ লাখ পশু বিক্রি হতে পারে। এসব পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য দরকার প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন লবণ। আর কক্সবাজারে মজুত রয়েছে ৪ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন লবণ।
লবণচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত তিন দিনে মণপ্রতি লবণের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত লবণের দাম আরও ১০ থেকে ৩০ টাকা বাড়তে পারে। বর্তমানে কক্সবাজারে মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৪৯০ টাকায়, যা তিন দিন আগে ছিল ৪৩০ থেকে ৪৪০ টাকা।
বিসিক কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজারসহ দেশের ৬৪ জেলায় কত পশু কোরবানি হচ্ছে এবং চামড়া সংরক্ষণের জন্য কী পরিমাণ লবণ দরকার, তা ইতিমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় লবণ জেলায় জেলায় ডিলারদের কাছে মজুত রয়েছে। তারপরও কোথায় ঘাটতি বা সংকট দেখা দিলে কক্সবাজার থেকে সরবরাহ করা হবে।
কক্সবাজারের কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ায় গত ১৩ মে থেকে কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর আগে উৎপাদিত পাঁচ লাখ টনের বেশি লবণ চাষিরা মাটির নিচে গর্ত খুঁড়ে সংরক্ষণ করেছিলেন। এখন গর্ত থেকে লবণ তুলে তাঁরা চড়া মূল্যে বেচাবিক্রি করছেন।
গত রোববার দুপুরে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, পিএমখালী এবং টেকনাফের হ্নীলা, রঙিখালী, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গর্ত থেকে তুলে বিক্রি করা হচ্ছে লবণ। প্রতি মণ লবণের দাম ৪৮০ থেকে ৪৯০ টাকা।
শাহপরীর দ্বীপের চাষি আবদুল মতলব (৪৮) প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানি উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ লবণ কিনে ট্রাকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে সরবরাহ করছেন। এ কারণে লবণের দাম বাড়ছে। গত রোববার তিনি ৪৮৫ টাকা মণ দামে লবণ বিক্রি করেছেন, যা মে মাসে বিক্রি হয়েছিল ৩৮০ টাকায়।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, গত মৌসুমে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছিল ২৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায়। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে প্রতি মণ লবণ সর্বোচ্চ ৫১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাতে চাষিরা লাভবান হয়েছেন। কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের জন্য লোকজনকে বেশি দামে লবণ কিনতে হচ্ছে।
বিসিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পাঁচ মাস) জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীতে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ। যা দেশে লবণ উৎপাদনে ৬২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
গত চার দিনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মণ লবণ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সরবরাহ করেছেন মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের নলবিলা গ্রামের ব্যবসায়ী মো. আলম (৫৫)। তিনি বলেন, কোরবানি উপলক্ষে লবণের চাহিদা বেড়েছে, এ কারণে দামও বাড়ছে। বিশেষ করে সংকট দেখা দিতে পারে—এমন আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা মাঠ থেকে লবণ সংগ্রহ করছেন। এতে গত কয়েক দিনে মাঠপর্যায়ে লবণের দাম মণপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে।
বিসিকের কক্সবাজার লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, ২০২০ সালে যখন লবণনীতি করা হয়, তখন দেশের লোকসংখ্যা ১৮ কোটি ধরে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন দেশের জনসংখ্যা গণনায় পাওয়া গেছে ১৭ কোটি। এ ক্ষেত্রে লবণের চাহিদা ২১ লাখ মেট্রিক টন। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে কক্সবাজারে উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ। জাতীয় চাহিদার ২১ লাখ মেট্রিক টন বাদ দিলে আরও অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন লবণ উদ্বৃত্ত থাকে।
বিসিকের তথ্যমতে, ২০২১-২২ মৌসুমে লবণের গড় বিক্রয়মূল্য ছিল প্রতি মেট্রিক টন ১০ হাজার টাকা, সে ক্ষেত্রে প্রতি মণের দাম পড়েছে ৪০০ টাকা। ২০২২-২৩ মৌসুমে প্রতি মেট্রিক টন লবণের গড় বিক্রয়মূল্য ১২ হাজার টাকা, এ ক্ষেত্রে প্রতি মণের দাম পড়ছে ৪৮০ টাকা।