গোয়ালন্দে একই স্থানে বিএনপির দুই পক্ষের জনসভা স্থগিত, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

গতকাল শুক্রবার রাতে গোয়ালন্দ পৌর বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভায় এক পক্ষ (বাঁয়ে) ও গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনে অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অন্য পক্ষ তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় একই স্থানে বিএনপির দুই পক্ষের পূর্বঘোষিত জনসভা স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার উপজেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফকীর মহিউদ্দিন আনছার ক্লাব ময়দানে ওই জনসভা হওয়ার কথা ছিল।

গতকাল শুক্রবার রাতে পৌর বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভায় এক পক্ষ ও গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনে অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অন্য পক্ষ তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে।

দুই পক্ষের ভাষ্য, কাল কালুখালীতে সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ তিন বাহিনীর প্রধানের উপস্থিত থাকার কথা আছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আগমনে দুই পক্ষ কর্মসূচি স্থগিত রাখছে। এ সময় দুই পক্ষ একে-অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী-১ (সদর-গোয়ালন্দ) আসনে বিএনপির রাজনীতি দুই ধারায় বিভক্ত। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বর্তমান কমিটির নেতাদের নিয়ে এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আসলাম মিয়া। অপর অংশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। তাঁর সঙ্গে আগের কমিটির অধিকাংশ নেতা-কর্মী আছেন। দুই নেতা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।

দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা কাল রোববার গোয়ালন্দের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফকীর মহিউদ্দিন আনছার ক্লাব ময়দানে জনসভা করার ঘোষণা দেয়। জনসভা সফল করতে কয়েক দিন ধরে প্রস্তুতিও নেয় উভয় পক্ষ। পাশাপাশি সভা-সমাবেশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে-অপরকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। এতে কর্মী-সমার্থকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। এর মধ্যে গতকাল রাতে দুই পক্ষ সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়ার কারণ দেখিয়ে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনে পৌর বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে এক পক্ষ। পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম মণ্ডলের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আসলাম মিয়া। সভায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিজাম উদ্দিন শেখ, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ আহমেদ, রাজবাড়ী পৌর বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, গোয়ালন্দ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মোল্লা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মূল কমিটির নেতৃত্বে দলীয় কর্মসূচি করার আহ্বান জানিয়ে কৃষক দলের নেতা আসলাম মিয়া বলেন, ‘দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর জন্য কাজ করব। যদি আপনাকে (খৈয়ম) মনোনয়ন দেয়, আমরা আপনার জন্য কাজ করব। সিনিয়র নেতা হয়ে দলের বিরুদ্ধে কীভাবে আলাদা কর্মসূচি পালন করেন, বোধগম্য হয় না। কালুখালীতে সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়ায় প্রধান উপদেষ্টা আসার কথা থাকায় আমরা কর্মসূচি স্থগিত করছি।’

সভায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁদের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। কাউন্সিলরদের ভোটে উপজেলা ও পৌরসভাসহ ওয়ার্ডে ওয়ার্ড সম্মেলন করে কমিটি গঠন করেছেন। নির্বাচিত কমিটিকে বাদ দিয়ে তারা (অন্য পক্ষ) আলাদা কর্মসূচি করবে, সেটা হবে না।

অন্যদিকে রাত সাড়ে আটটার দিকে রেলস্টেশনে অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জনসভা স্থগিত ঘোষণা করে অন্য পক্ষ (খৈয়ম)। সংবাদ সম্মেলনে গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সুলতান-নূর ইসলাম, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, উপজেরা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি রুস্তুম আলী মোল্লা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহিন মিয়া বক্তব্য দেন।

সুলতান-নূর ইসলাম বলেন, ‘আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নেতৃত্বে বিএনপি করি। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে এখানে উপস্থিত সবাই মামলা খেয়ে জেল খেটেছি। অপর পক্ষ আমাদের বাদ দিয়ে পছন্দমতো কমিটি করে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। আমরা অনেক আগে ৫ জানুয়ারি (রোববার) কর্মসূচি দিয়েছিলাম। আমাদের প্রতিহত করতে তারা পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। কালুখালীতে সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়ায় সরকারপ্রধানসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেকে থাকবেন। তাই আমাদের পূর্বের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করছি।’