পাট চাষে লোকসান, আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক
রাজবাড়ীতে পাট চাষে খরচ বেড়েছে। তবে বাজারে গত বছরের তুলনায় এবার কম দামে পাট বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কৃষকেরা পাট আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
পাটচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে (৩৩ শতাংশে এক বিঘা) জমিতে পাট চাষ করতে গড়ে ২৯ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। পাট হয়েছে সাধারণত ৮ থেকে ১০ মণ। বাজারে সবচেয়ে ভালো পাটের দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বিঘায় পাট চাষ করে বিঘাপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
সদর উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের পাটচাষি আলম শেখ বলেন, ‘প্রতিবছর পাট চাষ করি। গত বছর পাট বিক্রি করেছি প্রতি মণ তিন হাজার টাকা। এই বছর খরচ আরও বেড়েছে। এতে করে পাটের দাম আগের বছরের তুলনায় বেশি হওয়া উচিত। সার ও ওষুধের দাম বেড়েছে। শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। তবে পানির অভাবে কারণে পাটের রং ভালো হয়নি। পাঁচ মণ পাট বাজারে এনেছি। প্রতি মণ পাট দুই হাজার টাকার বেশি কেউ বলছে না। এই দামে বিক্রি করলে অনেক টাকা লোকসান হবে। আবার পাট চাষে ধারদেনা করতে হয়েছে। বিক্রি করে এসব পরিশোধ করতে হবে।’
পরিতোষ মজুমদার বলেন, ‘আমরা কিন্তু পরিশ্রম কম করি নাই। কিন্তু পাটের মান এবার ভালো হয়নি। জাগ দেওয়ার সময়ও ঠিকমতো পানি পাই নাই। বাজারে এবার পাটের দাম নেই। মূল খরচও উঠবে না। বরং পাঁচ-সাত হাজার টাকা বিঘা প্রতি লোকসান হবে। এভাবে লোকসান হলে আগামী পাট আবাদ করব কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, এত কষ্ট করে ন্যায্যমূল্য না পেলে আমাদের আর কিছুই বলার থাকে না। শুধু বুক চাপড়াতে ইচ্ছা করে।’
চলতি মৌসুমে রাজবাড়ীতে ৪৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয়েছে বালিয়াকান্দি উপজেলায়।
রাজবাড়ী বাজারের পাট ব্যবসায়ী বসির আহমেদ বলেন, ‘পাটকল কর্তৃপক্ষ সেভাবে পাট কিনছে না। আবার পাটের মানও ভালো না। আমরা প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। সব বাজারের একই অবস্থা।’
রাজবাড়ী বাজারের পাট ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ বলেন, ‘আমাদের গত বছর পাটের ব্যবসা ভালো যায় নাই। অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। অনেক পাট বিক্রি করতে পারি নাই। পাট গুদামে ফেলে রেখে লাভ কী? এ জন্য এবার বুঝে শুনে পাট কিনছি।’
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার মাটিই পাট চাষের উপযোগী। চলতি মৌসুমে ৪৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ করা হয়েছে বালিয়াকান্দি উপজেলায়। এই উপজেলায় ১২ হাজার ৩৬০ হেক্টরে পাট চাষ করা হয়েছে। আর গোয়ালন্দ উপজেলায় পাটের আবাদ সবচেয়ে কম। সদর উপজেলায় ১০ হাজার ৯২ হেক্টর, পাংশা উপজেলায় ১২ হাজার ২৭৮ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর এবং গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪ হাজার ৮৭০ হেক্টর। গত বছর আবাদ করা হয়েছিল ৪৯ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় ৭৭০ হেক্টর কম।
ফরিদপুর পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পাট পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বছর পাট জাগ দেওয়ার জন্য অনেক এলাকায় পর্যাপ্ত পানি ছিল না। এতে করে পাটের গুণগত মান ভালো হয় নাই। কোয়ালিটি ভালো না হলে পাট বিদেশে রপ্তানি করা যায় না। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও পাট রপ্তানি অনেকটা কমে গেছে। এতে করে বিদেশে আশানুরূপভাবে পাট রপ্তানি করা যায় নাই। আবার দেশেও চাহিদার তুলনায় বেশি পাট আবাদ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পাটের দাম তুলনামূলকভাবে কম।’
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৈশ্বিক মন্দা পাটের দাম কম হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। এ ছাড়া পাটের গুণগত মানও একটি বড় বিষয়। বোরো মৌসুমে কৃষকদের সরকারিভাবে বীজ বিতরণ করা হবে। পাট চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে ভালো পাট মণপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এ ধরনের পাট খুব কম।