সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়রের ‘কথার লড়াই’
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও বিএনপি দলীয় বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁরা একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁদের ‘বাহাস’ নিয়ে এখন জোর আলোচনা চলছে নগরে।
গতকাল সোমবার দুপুরে মহান মে দিবস উপলক্ষে মহানগর শ্রমিক দল আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নাম উল্লেখ না করে তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলে বক্তব্য দেন। জবাবে রাতেই আরেক সভায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র আরিফুলকে ‘বহিরাগত’ উল্লেখ করে পাল্টা বক্তব্য দেন।
নগরের রেজিস্টারি মাঠে আয়োজিত মে দিবসের আলোচনা সভায় মেয়র আরিফুল বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সিলেটকে এমন একটা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সিলেটের মানুষের কাছে সিলেটের যেন কোনো মানুষ নেই। সিলেটে যেন কোনো নেতৃত্ব নেই। আমাদের সবক দেওয়ার জন্য বাইরে থেকে এনে আমাদের নেতৃত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা তা পরিহার করি।’
সিলেটে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এ মাটির সন্তানেরাই যথেষ্ট উল্লেখ করে আরিফুল বলেন, ‘বাইরে থেকে কেউ এসে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের দাস বানাতে পারবে না। আমরা কারও দাস বনতে (হতে) চাই না। আমাদের রক্তচক্ষুর ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা এই সিলেটের মাটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত, তাঁদের বাদ দিয়ে হায়ার (ভাড়া) করে কাউকে এনে বিভিন্ন এলাকার মানুষদের দিয়ে আমাদের নেতৃত্ব দেবেন, আমরা কি সবাই দাসখতে দস্তখত (দাসত্বের অঙ্গীকার) দিয়েছি? না, এটা হতে পারে না। সিলেটের মানুষ জেগে উঠেছে।’
রাত সাড়ে নয়টার দিকে মেয়র আরিফুলের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মজুমদারি এলাকায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এ সময় আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নাকি বলেন, আমি বাইরে থেকে এসেছি। আমার বাড়ি তো ১৭ কিলোমিটার দূরে। আমার জন্ম হয়েছে এই সিলেটেই। ওনার বাড়ি তো কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার জেলা)। কমলগঞ্জ থেকে যদি তিনি সিলেটের মেয়র হতে পারেন, তাহলে আমি সিলেটে থেকে কেন সিলেটের মেয়র হতে পারব না?’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, ‘এই শহরে রাজনীতি করেছি। প্রবাসে গেলেও এই শহরের জন্য রাজনীতি করেছি। সংসদ নির্বাচন, সিটি নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রতিটি নির্বাচনে আমি এই সিলেটে ছিলাম। এই সিলেটের মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য আমি কাজ করেছি, এটা কোনো বিষয় নয়। উনি ভয় পান কেন? ভয় পাওয়ার কারণ কী? উনি তো উন্নয়ন করেছেন। শুনেছি, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছেন! তো নির্বাচনে ভয় পান কেন?’
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, ‘আরিফুল হক সাহেব আমার থেকে বয়সে প্রায় ১৩ বছরের বড়। আমি ওনাকে স্বাগত জানাই। উনি বিগত দুটি নির্বাচন করেছেন ধানের শীষ নিয়ে। আগামী ২১ তারিখের নির্বাচনে আমার নেত্রী আমাকে নৌকা দিয়ে পাঠিয়েছেন। আমি ওনাকে স্বাগত জানাই। উনি গিয়ে ওনার দল বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে এসে আগামী ২১ তারিখ আমার সঙ্গে কমপিটিশন (প্রতিদ্বন্দ্বিতা) করুক। উনি জনগণের কাছে যাক। আমিও জনগণের কাছে যাই। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে, কে হবে আগামী পাঁচ বছরের মেয়র। কার বাড়ি কোথায়, কে কোথা থেকে এসেছে, এটা না বলে ধানের শীষ নিয়ে ২১ তারিখ আসেন, তখনই প্রমাণ হবে সিলেটের মানুষ কাকে ভোট দেয়।’
মেয়র আরিফুল ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কথার লড়াইকে ‘রাজনৈতিক’ বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় হরহামেশাই এমন হয়ে থাকে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা প্রার্থীদের কাছ থেকে শালীন আচরণ প্রত্যাশা করি। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সবাইকে সংযত আচরণ করা উচিত।’
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ইভিএমে ভোট হবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৩ মে, বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন।
নির্বাচনে মেয়র পদে দলের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্তের কারণে দলটির মনোনয়নে গত দুটি নির্বাচনে জয় পাওয়া আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
গতকাল মে দিবসের আলোচনায় আরিফুল সিলেটের প্রেক্ষাপটে আগামী সিটি নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দেন। যদিও ২০ মে জনসভা করে চূড়ান্তভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন বলেও তখন জানিয়েছেন।