নাসিরনগরে জাল ভোটে বাধার দেওয়ায় পোলিং কর্মকর্তা-এজেন্টকে মারধর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক পোলিং কর্মকর্তা ও প্রার্থীর এজেন্টকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় চশমা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ হুমায়ূন কবির, তাঁর ভাই আলমগীর ও সমর্থকদের জাল ভোট দিতে বাধা দেওয়ায় তাঁরা ওই কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথের পোলিং কর্মকর্তা ফয়সাল ইসলাম ও টিউবওয়েল প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হুদার এজেন্ট মনির হোসেনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পলাশ মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, চশমা প্রতীকের প্রার্থী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে, তবে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল না।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোনাব্বর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টিউবওয়েল প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাসিরনগরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চশমা প্রতীকের প্রার্থী শেখ হুমায়ূন কবির কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বেলা ১১টার দিকে চাতলপাড় ইউনিয়নের রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথের পোলিং কর্মকর্তা ফয়সাল ইসলাম ও টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী কামরুল হুদার এজেন্ট মনির হোসেন তাঁদের বাধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রার্থী হুমায়ূন কবির, তাঁর ভাই আলমগীর ও সমর্থকেরা ফয়সাল ও মনিরকে মারধর করেন। এ সময় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ওই কেন্দ্রে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর কিছুক্ষণ ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ হুমায়ূন কবিরের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
খুব কম ভোটার উপস্থিতি
নাসিরনগরে আজ দিনভর অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রই ছিল ভোটারশূন্য। চেয়ারম্যান প্রার্থী চারজনের মধ্যে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেই দুই প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত উপজেলার তুল্লাপাড়া, তিলপাড়া, চিতনা, গুটমা, বুড়িশ্বর ও দাঁতমণ্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, আশুতোষ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র ও নাসিরনগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্রগুলোর একটিতেও ভোটারদের কোনো লাইন পাওয়া যায়নি।
তুল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টায় দেখা যায়, ২ নম্বর কক্ষে ভোট গ্রহণের প্রথম এক ঘণ্টায় একটি ভোটও পড়েনি। ২ হাজার ৬৭৩ ভোটের মধ্যে প্রথম ১ ঘণ্টায় পড়েছে ১২৩টি ভোট, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। বিকেল চারটার দিকেও কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল না। দাঁতমণ্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯টা পর্যন্ত প্রথম ১ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৪০৫ ভোটের মধ্যে পড়ে মাত্র ১টি ভোট।
তবে তুল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাকারা উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রে আনুমানিক ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
বেলা ১১টায় তিলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৮৬২ ভোটের মধ্যে পড়ে ৩৩৪ ভোট, অর্থাৎ ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ওই কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রমোদ রঞ্জন সূত্রধর (মোটরসাইকেল প্রতীক) ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ওমরাও খানের (আনারস প্রতীক) কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
চিতনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৮টি বুথে ৩ হাজার ৩৩৪ ভোটের মধ্যে প্রথম ২ ঘণ্টায় পড়ে ১৯৩ ভোট এবং দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত পড়ে ৩৯৫টি ভোট। পৌনে ৪ ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। সৈয়দ কামরুজ্জামান উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ৩৩ ভোটের মধ্যে সকাল ১০টা পর্যন্ত পড়েছে ২২২ ভোট এবং দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত পড়েছে ৪৪৭টি ভোট। অর্থাৎ সোয়া ৪ ঘণ্টায় পড়েছে ১৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ ভোট। এই কেন্দ্রের ৬ নম্বর বুথে কোনো চেয়ারম্যান প্রার্থীরই এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
গুটমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৩১ ভোটের মধ্যে পড়েছে ৫৫২টি ভোট। প্রথম ৪ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ। বেলা একটা পর্যন্ত উপজেলার বুড়িশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রে ২০ শতাংশ ভোট এবং একই বিদ্যালয়ের মহিলা কেন্দ্রে ২২ শতাংশ ভোট পড়ে।
বুড়িশ্বর গ্রামের ভোটার আলমগীর হোসেন বলেন, গ্রামে এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। সবাই ধান কাটায় ব্যস্ত। তা ছাড়া ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে।
বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী ওমরাও খান প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের ওপর মানুষের আস্থা কমেছে। দীর্ঘদিন ধরে মানুষ দেখে আসছে, ভোটকেন্দ্রে না গেলেও ভোট হয়ে যায়। তাই ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে। সেই সঙ্গে ধান কাটার ব্যস্ততার কারণে ভোটাররা আসছেন না।