দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মোশারফ হোসেন ভোটের লড়াইয়ে নেমে খুব একটা স্বস্তিকর অবস্থানে নেই। আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তিনি এখন ভোটে জেতা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন বেশির ভাগই স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর ট্রাক ও ঈগল প্রতীকের পক্ষে।
জোট থেকে আসনটি জাসদকে ছেড়ে দিলেও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহ (আবদুল্লাহ আল মামুন) ঈগল প্রতীক এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইস্কান্দার মির্জা ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। দলটির নেতাদের বড় একটি অংশ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। তাঁদের মধ্যে রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদসহ কার্যকরী কমিটির অন্তত ৫০ নেতা প্রকাশ্যে দুই স্বতন্ত্রের সঙ্গে রয়েছেন।
১৪-দলীয় জোটের হিসাব-নিকাশের কারণে এবারও জোটের প্রার্থী হিসেবে মোশারফ হোসেনকে নৌকা প্রতীক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।
কিন্তু এবার আর শরিকদের ছাড় দিতে চায় না স্থানীয় আওয়ামী লীগ। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, আসনটি বারবার শরিকদের ছেড়ে দেওয়ায় বঞ্চিত হয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এবার সেই বঞ্চনার অবসান চান তাঁরা। এ জন্য এবারের নির্বাচনে তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এ অবস্থায় জাসদের অধিকাংশ নেতাই ভোটের মাঠে টিকে থাকতে পারা বা নির্বাচনে জিতে আসতে পারা নিয়ে চিন্তায় আছেন।
গত দুই দিনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১০ নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলছেন, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় হাসানুল হক ইনুর দল জাসদের কোনো অবস্থান নেই। নেতা-কর্মীর সংখ্যাও হাতে গোনা। এ অবস্থার পরও আসনটি তাদের ছেড়ে দেওয়ায় হতাশ হয়েছেন তাঁরা। দীর্ঘদিন এখানে দলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। তাঁদের মতে, এ আসনের আওয়ামী লীগ করা মানুষ এখন অবহেলিত।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানকে জোট থেকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তিনি এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। যাচাই-বাছাই শেষে ঋণখেলাপির অভিযোগে মান্নানের মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এ আসনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমে মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। এরপর নৌকার প্রার্থী পরিবর্তন নিয়ে দলে নানা রকম আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়। শেষমেশ আওয়ামী লীগ ১৪–দলীয় জোট–সমর্থিত জাসদ থেকে মোশারফকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে।
জাসদ নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একদিকে জোটের মনোনীত প্রার্থী দিয়েছে, অন্যদিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রেখে নির্বাচনের মাঠ জটিল করে দিয়েছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নামে-বেনামে থাকা প্রার্থীদের সরিয়ে না নিলে জাসদের নির্বাচনে জেতার সুযোগ কম। গত দুবারের মতো এবারও সরকারের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে যেতে চান তাঁরা। কারণ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও তাঁদের জেতার সম্ভাবনা নেই। তাঁরা সমঝোতার মাধ্যমে ভোট করে সহজে জিততে চান। তাঁরা এখন পর্যন্ত সরকারের দিক থেকে কোনো সমঝোতার উদ্যোগ না দেখে অস্বস্তিতে আছেন।
জোট–সমর্থিত প্রার্থী মোশারফ হোসেন তাঁর অসন্তোষ গোপন রাখেননি। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জোটকে আসন ছেড়ে দেওয়ার পরও আওয়ামী লীগের দুই নেতা স্বতন্ত্রের নামে লড়াই করছেন। এতে আমাদের জোটের যে নীতি, তা মার খাচ্ছে এই নির্বাচনে। এতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে। জোট ও দলের ভেতরে বিশৃঙ্খলা হবে। জোটের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারে।’ সার্বিক পরিস্থিতি জোট নেতাদের জানানো হয়েছে বলেও জানান জাসদ নেতা মোশারফ।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জাসদের পক্ষে আর ‘ভাড়া খাটবে না’ বলে জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘জাসদ নেতা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবেন, আমিও জনতার নেতা হয়ে মাঠে থাকব।’
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ইস্কান্দার মির্জা শামীম বলেন, ‘বারবার বঞ্চিত হওয়ায় নেতা-কর্মীরা দলবিমুখ হয়ে পড়ছেন। তাই দলের নেতা-কর্মীরা এবার আমার পক্ষে মাঠে নেমেছেন।’