চামড়া সংগ্রহে ব্যস্ত সাভার ট্যানারির মালিকেরা, এবারও দূষণের শঙ্কা
ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরে বিসিক চামড়াশিল্প নগরে কোরবানির পশুর চামড়া ঢুকতে শুরু করেছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক, পিকআপে করে কাঁচা চামড়া শিল্পনগরে আনা হয়। এসব চামড়া সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন ট্যানারির মালিকেরা। প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানির ঈদে চামড়াশিল্প নগর ঘিরে দূষণের শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে।
ট্যানারি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আজ ও কাল শুধু ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবেন ট্যানারির মালিকেরা। এরপর লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহ করা হবে। তবে এক সপ্তাহ পর থেকে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে লবণ মাখানো চামড়া সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। এবার গরু, মহিষ ও ছাগল মিলিয়ে মোট ১ কোটি ১০ লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কেনা হচ্ছে বলে দাবি করছেন ট্যানারির মালিকেরা।
ঢাকার ধামরাইয়ের ডাউটিয়া জামিয়া ইসলামিয়া কওমি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সালাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চামড়ার গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি চামড়া ৭৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। দাম ভালোই মনে হয়েছে। অনেকে একটু বেশি টাকায়ও বিক্রি করেছেন। তাঁদের চামড়ার মান একটু বেশি ভালো ছিল।
এদিকে দুপুরের দিকে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চামড়াবোঝাই ১০টি ট্রাক থামিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে। চামড়াশিল্প নগরের আজমির লেদারের মালিক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, আমিনবাজার সেতুর ঠিক পরই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েকজন তাঁদের ১০টি ট্রাক আটকে রেখেছিলেন। তাঁরা ট্রাকপ্রতি ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে বলেন। বিষয়টি সাভার মডেল থানায় জানালে ট্রাকগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।
বিসিক চামড়াশিল্প নগরীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের পর থেকে শিল্পনগরীতে কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করে। রাত আটটা পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ কাঁচা চামড়া ট্যানারিতে ঢুকেছে। এবার তাঁদের ৬ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আছে। এখন পর্যন্ত চামড়া পরিবহনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাননি।
এবারও দূষণের শঙ্কা
প্রতিবারের মতো এবারও চামড়াশিল্প নগর ঘিরে দূষণের শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবার চামড়াশিল্প নগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) তরল বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা নিয়ে আশাবাদী সিইটিপির দায়িত্বে থাকা ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া ট্যানারিগুলোর চামড়া সংগ্রহসহ প্রক্রিয়াজাতকরণে বিসিকের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে এবার পর্যাপ্ত লবণ মজুত আছে। শিল্পনগরীতে সুষ্ঠুভাবে চামড়া ঢোকাতে ৫০ জনের বেশি স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে দল গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন মাস শিল্পনগরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কোম্পানির লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম শাহনেওয়াজ বলেন, শিল্পনগরীর সিইটিপির ওভারহোলিং ছাড়াও বেশ কিছু সংস্কার করা হয়েছে। আগে চারটি ব্লোয়ার চললেও এখন ১৬-১৭টি চলছে। এতে ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথ বেড়েছে। ফাইন স্ক্রিন ৩-৪টি নষ্ট ছিল। সেখানে আরও কয়েকটি চালু করা হয়েছে। সাধারণ ক্রোম রিকভারি ইউনিটটি এক বছর বন্ধ থাকলেও গত ফেব্রুয়ারিতে ৫০ ভাগ চালু করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে বাকি ৫০ ভাগ চালু হয়ে যাবে। এতে সিইটিপিতে ক্রোমের পরিমাণ অনেক কমে যাবে। ট্যানারিগুলো নিজস্ব ক্রোমিয়াম রিকভারি ইউনিট স্থাপন করলে সিইটিপির ক্রোমের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পুকুরও কাটা হয়েছে।
দূষণের শঙ্কার কথা বলছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ঢাকা জেলা) জহিরুল ইসলাম তালুকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি ট্যানারিতে ক্রোম রিকভারি ইউনিট স্থাপনের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এতে ক্রোম রিকভারি ইউনিট ছাড়া ট্যানারিগুলো ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করার পর তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ক্রোম রিকভারি ইউনিট চালুসহ সিইটিপির কার্যক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে দূষণ হলেও কিছুটা কমবে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ক্রোম রিকভারি ইউনিট করা আছে। বিক্ষিপ্তভাবে ট্যানারিগুলোতে এই ইউনিট করতে কোনো লে-আউট দেওয়া হয়নি। অল্প জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ট্যানারির পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়। বড় ট্যানারিগুলোকে ক্রোম রিকভারি ইউনিট করতে বলা হচ্ছে। ছোট ট্যানারিগুলো সাধারণ ক্রোম ইউনিট ব্যবহার করবে। এবার দূষণের আশঙ্কা থাকলেও সিইটিপির অবস্থা উন্নতির দিকে।