রাজশাহীর গণসমাবেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিশ্রাম নেওয়ার প্যান্ডেল ভেঙে দিল পুলিশ
রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশের জন্য ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী নগরের হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ (মাদ্রাসা মাঠ) ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার আগেই দূর থেকে আসা নেতা-কর্মীদের বিশ্রাম ও রাতযাপনের জন্য মাঠের পাশে একটি জায়গায় গতকাল সোমবার থেকে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছিল। আজ মঙ্গলবার পুলিশ তা ভেঙে দিয়েছে।
বিএনপির গণসমাবেশের জন্য চাওয়া মাঠের পাশে নির্মাণাধীন এই প্যান্ডেলে চার-পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীর থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই গণসমাবেশ।
রাজশাহী নগরের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, তাঁকে এই প্যান্ডেল করার জন্য রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী বিপ্লব দায়িত্ব দিয়েছিলেন। গতকাল সারা দিন এই জায়গাটায় মাটি ফেলে তিনি ঠিক করেছেন। সারা দিন বাঁশ বাঁধার কাজ করেছেন। কাজ করার সময় রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান এসে দেখেছেন। গতকাল তাঁকে কিছুই বলেননি। তখন নিষেধ করলে তিনি কাজ করতেন না। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওসি এসে প্যান্ডেলের বাঁশ খুলে ফেলতে বাধ্য করেন।
আজ বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠের পাশের রাস্তার ওপারে যে প্যান্ডেলটি তৈরি করা হচ্ছিল, তার বাঁশগুলো খুলে ফেলা হয়েছে। শুধু দুই পাশে দুটি বাঁশ রয়েছে। ওই স্থানটি সিপাইপাড়ায় পড়েছে।
ধর্মঘটের আগে বগুড়া ও নওগাঁ থেকে তাঁদের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার নেতা-কর্মী রাজশাহীতে ঢুকবেন। তাঁদের মাঠেই থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল।
এর আগে থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের রাতযাপনের জন্য সমাবেশের মাঠেই একটি প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল দলটি। তখনো মাঠের অনুমতি ছিল না বলে গতকাল ওই প্যান্ডেলের কাজ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এরপর মাঠের পাশে আরেকটি প্যান্ডেল নির্মাণ শুরু করলে সেখানে অনুমতি নেই, জানিয়ে সেটিও আজ ভেঙে দেওয়া হলো।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি বিএনপির পক্ষ থেকে রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশের জন্য মাঠ চেয়ে আবেদন করা হয়। তাঁরা রাজশাহী নগরের মাদ্রাসা মাঠে (হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ) সমাবেশের জন্য আবেদন করেন। গতকাল বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ১ ডিসেম্বর থেকে তাঁদের মাঠ ব্যবহার অনুমতি দেন। তবে সমাবেশ ও মাইক ব্যবহারের জন্য রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের অনুমতি এখনো মেলেনি। তবে আশ্বাস পেয়েছেন।
গণসমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার (দুলু) প্রথম আলোকে বলেন, ১ ডিসেম্বর থেকে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলেও ওই দিন থেকে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তাঁদের নেতা-কর্মীরা ওই দিন তো আর আসতে পারবেন না। ধর্মঘটের আগে বগুড়া ও নওগাঁ থেকে তাঁদের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার নেতা-কর্মী রাজশাহীতে ঢুকবেন। তাঁদের মাঠেই থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। কিন্তু আগে থেকে মাঠ না পাওয়ার কারণে তাঁরা এই নেতা-কর্মীদের রাখার জন্য মাঠের পাশে একটা বিকল্প জায়গা করছিলেন। পুলিশ সেটাও করতে দিচ্ছে না। এটা দুঃখজনক ব্যাপার। তিনি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁদের সঙ্গে কোনোরকম অসহযোগিতামূলক আচরণ করছে না। অথচ পুলিশ কেন বাড়াবাড়ি করছে, এটাই তাঁরা বুঝতে পারছেন না।
জানতে চাইলে নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তারা (বিএনপি) যে মাঠের অনুমতি নিয়েছে, তাদের যা করার সেখানেই করতে হবে। অনুমোদিত জায়গার বাইরে তারা কিছু করতে পারবে না। গতকাল থেকে যখন কাজ শুরু করা হলো, তখনই কেন তাদের নিষেধ করা হয়নি—এ প্রশ্নে ওসি বলেন, রাতের অন্ধকারে কখন তারা কাজ করেছে পুলিশ দেখতে পায়নি। নজরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে এখনো পরীক্ষা চলছে। তিনি ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি। পরীক্ষা চলাকালে তিনি ওই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন না। এ জন্য পরীক্ষা শেষ হলে ১ ডিসেম্বর থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিএনপি শুধু ৩ ডিসেম্বর মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে।