বাঘাইছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে প্রাক- প্রাথমিক শিক্ষার পাড়া কেন্দ্র। আজ সকালে রাঙামাটি সদরের শুকরছড়ি বোধিপুর গ্রামেছবি: সুপ্রিয় চাকমা।

পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের নিচু এলাকা ডুবে গেছে। এতে অন্তত সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দুর্গত পরিবারগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বহু দুর্গম এলাকার প্রকৃত চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি।
বাঘাইছড়ি উপজেলা ছাড়া রাঙামাটি সদর উপজেলায়ও বন্যার খবর মিলেছে। সদর উপজেলার সাপছড়িতে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫০টি পরিবার।

বন্যায় জেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলা। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে টানা বৃষ্টিতে কাচালং নদীর পানি বেড়ে বাঘাইছড়ি পৌরসভা, বঙ্গলতলী, রুপকারী, খেদারমারা ও সাজেক ইউনিয়নের নিচু এলাকা তলিয়ে যায়। বিশেষ করে উপজেলা সদরের হাজীপাড়া, মাস্টারপাড়া, তুলাবান, মুসলিম ব্লক, বাবুপাড়া, মাদ্রাসাপাড়া, উপজেলা সদর ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ক্ষতি বেশি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় এখনো পানি বাড়ছে। উপজেলায় সব মিলিয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রায় ২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার।

ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে ডুবে গেছে সেতু। ঝুঁকি নিয়ে তার ওপর দিয়ে চলাচল করছে মানুষজন। রাঙামাটি সদরের বোদিপুর গ্রামে আজ সকালে
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

এদিকে রাঙামাটি সদর উপজেলা সাপছড়ি ইউনিয়নে ভারী বৃষ্টিতে মানিকছড়ি ছড়ার পানি বেড়ে গেছে। এতে সাপছড়ি এলাকার সাপছড়ি পাড়া, মানিকছড়ি, বোধিপুর ও কামালপাড়ায় প্রায় ২৫০টি চাকমা পরিবারের বাড়ি-ঘর বন্যায় তলিয়ে গেছে। সাপছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রবীণ চাকমা বলেন, ‘আজ ভোর থেকে হঠাৎ পানি বেড়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখি, খাটের নিচে পানি। পানি থেকে বাঁচতে বাসিন্দারা দ্রুত উঁচু এলাকায় চলে যান। অনেকে সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে পারেননি। গ্রামগুলোর সবজি ও ফসলের খেতও তলিয়ে গেছে।’

ভারী বৃষ্টিতে জেলায় পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া সেতু ডুবে ব্যাহত হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। সড়কের ওপর বিশাল পাহাড় ধসে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সাড়ে ৯টার দিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ধসে পড়া মাটি সরানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পাহাড় থেকে ধসে পড়া মাটি সরানো হচ্ছে। আজ সকালে রাঙামাটির ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকায়
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড়ধসের ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের কুতুকছড়ি বাজার এলাকায় বেইলি সেতু তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে পর্যটনকেন্দ্র সাজেকে এখনো আটকে পড়ে আছেন দুই শতাধিক পর্যটক। গত মঙ্গলবার সকালের দিকে ১৭টি জিপ, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল যোগে ২৮৬ জন পর্যটক রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে আসেন। পাহাড়ি ঢলে বাঘাইঘাট-সাজেক সড়ক ডুবে যাওয়ায় পর্যটকেরা আটকে পড়েছেন। যত দিন সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে না, তত দিন পর্যটকদের সাজেকে থাকতে হবে বলে জানা গেছে।