আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবক দিতে হবে না: জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান

কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির শফিকুর রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘ব্যাংক, বিমা, আর্থিক খাত লুটেপুটে শেষ করে দিয়ে, এই দেশের মানুষের গচ্ছিত আমানত সবকিছু গিলে ফেলে নিজেরা পালানোর আগে সবকিছু বিদেশে পাচার করেছে। পালায় কারা? সন্ত্রাসী, অপরাধীরা। যারা দেশকে ভালোবাসে, তারা পালায় না। গালভরা বুলি দিয়েছিলেন সেই চোর–ডাকাতের লিডার, “আমি অমুকের মেয়ে, আমি পালাব না”।’

জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘তিনি যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, আপনারা শান্তিতে থাকুন আমরা চাই। আমাদেরকে আপনারা শান্তিতে থাকতে দিন। আপনারা (প্রতিবেশী) পাকঘরে (রান্নাঘর) কী পাকাবেন, আমরা জিজ্ঞেস করি না। আমাদের পাকঘরে তাকানোর চেষ্টা করবেন না। আমাদেরকে আপনারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন, ভালো। আপনাদের নিজের চেহারা আয়নায় দেখুন। আপনারা সেখানে (প্রতিবেশী দেশ) যাদেরকে মাইনরিটি বলেন, তাদের সঙ্গে কী আচরণ করেন। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবক দিতে হবে না। যুগ যুগ ধরে এ দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা কোনো দুষ্কৃতকারীকে এ দেশে কোনো মতলব হাসিল করতে দেব না। আমাদের দেশে কোনো মেজরিটি, মাইনরিটি নেই। এ দেশের সব নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। এটা আমরা চাই না, দেশে একটা পরিবর্তন হলে বিভিন্ন উপাসনালয়ে পাহারা বসাতে হবে। এমন একটি সামাজিক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে চাই, যেখানে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, মঠ কিছুই পাহারা দিতে হবে না। মানুষের বিবেক সবকিছুকে পাহারা দেবে।’

আজ শনিবার দুপুরে জামায়াতে ইসলামী মৌলভীবাজার জেলার উদ্যোগে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় আমির শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এই কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

শফিকুর রহমান স্লোগানরত যুবকদের দেখিয়ে বলেন, ‘তিনটা নির্বাচন হয়েছে। যাদের বয়স ৩০-৩২ বছর হয়েছে, তারা একটা ভোট দিতে পারেনি। তাদের সব ভোটকে হত্যা করা হয়েছিল, ভোটের গণহত্যা হয়েছে। খুনি, সন্ত্রাসী, অপরাধী—এরা রাজনীতিবিদ নয়। এরা দুর্বৃত্ত। দুর্বৃত্তদের প্রতিটি অন্যায়-অপরাধের বিচার করতে হবে। জাতিকে এরা ৫৩ বছর ধরে যার যার কৌশলে ফ্যাসিজমের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করে রেখেছিল। স্বাধীনতার শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, মেজরিটি-মাইনরিটি কতভাবে যে বিভক্ত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘জাতিকে যখন টুকরা টুকরা করে রাখা যায়, তখন তাদের গোলাম বানানো সহজ হয়। তারা ধরে নিয়েছিল, তারা দেশের মালিক। আমরা সবাই ভাড়াটে। মালিকেরাই দেশে আছে, ভাড়াটেরা পালিয়ে গেছে।’

জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন। শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

জামায়াতের আমির বিডিআর হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘একটা বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। নাম বিজিবি রাখা হয়েছে। আগে ছিল বাংলাদেশ রাইফেলস। এখন নাম দিয়েছে বর্ডারের চৌকিদার। আমরা সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’ তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর দফায় দফায় অনেক সংগ্রাম আমরা করেছি। আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারিনি। স্বৈরশাসক তাড়াতে পারিনি। আমাদের সন্তানেরা পেরেছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এ রকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। আগামীর বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতে তুলে দেব।’

জামায়াতের আমির চা-শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের বেশির ভাগ চা-বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। চা-শিল্প অনেকটা ধ্বংসের পথে। চা-শিল্পে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া প্রয়োজন।

শফিকুর রহমান আরও বলেন, মৌলভীবাজারে সরকারি উদ্যোগে কোনো উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় নেই। বর্তমান সরকারের কাছে যেকোনো একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর মৌলভীবাজার জেলা আমির মো. শাহেদ আলী। জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী ও সহকারী সেক্রেটারি হারুনুর রশিদের যৌথ সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন হবিগঞ্জ জেলা আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব ও মো. আবদুল মান্নান, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম, হেফাজতে ইসলামির জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সবুর প্রমুখ।