দলিল লেখকদের কর্মবিরতিতে সীতাকুণ্ড সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অচলাবস্থা

দলিল লেখকদের কর্বিমরতি চলছে। সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে অলস সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। গতকাল বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সাব রেজিস্টার কার্যালয়েপ্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দলিল লেখকদের সঙ্গে সাবরেজিস্ট্রারের বিরোধের জেরে একরকম অচল হয়ে পড়েছে কার্যালয়। গত বুধবার থেকে সাবরেজিস্ট্রার মো. রায়হান হাবীবকে অপসারণের দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে দলিল লেখক সমিতি। এর কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সীতাকুণ্ডের সাধারণ বাসিন্দারা।

গত সোমবার রাতে একটি দলিল রেজিস্ট্রেশনকে কেন্দ্র করে হারুনুর রশিদ নামের এক দলিল লেখকের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সাবরেজিস্ট্রারের সহকারী শিল্পী রানী দত্ত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান।

এ বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ কামাল বলেন, সাবরেজিস্ট্রার রায়হান হাবীব সীতাকুণ্ডে যোগদানের পর থেকে দলিল লেখকদের সঙ্গে একাধিকবার বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করার কারণে এই বিরোধ শুরু হয়। তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেন। পরে গত জুলাই মাসে জেলা রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা গ্রহণ না করার জন্য সাবরেজিস্ট্রার রায়হান হাবীবকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর কিছুদিন সব ঠিক ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তিনি আগের রূপ ধারণ করেন। সাবরেজিস্ট্রারকে অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা দিতে গেলে সেই টাকা গ্রাহকদের থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এই নিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে তাঁদের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দলিল রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি থেকে দলিল লেখক হারুনুর রশিদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বহিষ্কার করা হয়।

সাইফুল্লাহ কামাল আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে অনেকবার বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তাই তাঁরা গত বুধবার থেকে কলমবিরতি শুরু করেছেন। পাশাপাশি মানববন্ধন ও সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলন করেছেন। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ফলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি চালু রেখেছেন। সাবরেজিস্ট্রার রায়হান হাবীবকে অপসারণের পর তাঁদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হবে।

জানতে চাইলে সাবরেজিস্ট্রার রায়হান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, একটা অবৈধ দলিল রেজিস্ট্রি করার চেষ্টা করেছিলেন হারুনুর রশিদ। তিনি রাজি হননি বলে বাইরে থেকে লোক এনে কার্যালয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন তাঁরা। সে জন্য তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশের জবাব গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে তাঁকে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। হারুনুর রশিদের কারণে এখন তাঁর কার্যালয়ে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে রাজস্ব আদায় বন্ধ হয়ে আছে। দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। বাধ্য হয়ে তাঁর অফিস সহকারী সীতাকুণ্ড থানায় একটি জিডি করেছেন।

দলিল লেখক হারুনুর রশিদ বলেন, ৭ অক্টোবর একটি দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য অন্য একজন দলিল লেখককে সহযোগিতা করতে কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ওই দলিল রেজিস্ট্রি করতে সাবরেজিস্ট্রার রায়হান হাবীব অতিরিক্ত টাকা দাবি করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। এ সময় সাবরেজিস্ট্রার তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাবও দিয়েছেন তিনি। তবু তাঁকে দলিল লেখার কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মেনে তিনি এখন দলিল লিখছেন না।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের জিডি নথিভুক্ত করা হয়েছে। এখন তাঁরা তদন্ত করে বিষয়টির আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।