নড়াইলে নবান্ন উৎসবে বাহারি পিঠার সমাহার
অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিকে এসে নড়াইলে জেঁকে বসেছে শীত। মাঠে মাঠে আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। নতুন ধানের চাল দিয়ে বাহারি পিঠা তৈরি করেছেন গ্রামীণ নারীরা। গ্রামবাংলার ২৫ পদের পিঠা নিয়ে তাঁরা এসেছেন নড়াইল সদর উপজেলার ধোপাখোলা এলাকার শিশু বিকাশ ও সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র নন্দনকাননে। শুক্রবার সকালে নন্দনকাননে আয়োজন করা হয় গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব। দিনব্যাপী চলে পিঠা খাওয়ার ধুম, গ্রামীণ লোকনৃত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উৎসবস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নানা পদের পিঠা নিয়ে নন্দনকাননে এসেছেন নারীরা। নকশি, দুধপুলি, দুধচিতই, চিতই, রসপাকান, ফুলুরি, সবজি ও ডাল-ঝালের তৈরি অন্তত ২৫ পদের দেশি পিঠা সাজিয়ে রাখা হয়েছে টেবিলে। সেখানে কথা হয় নীলিমা বাগচী নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিঠা উৎসব বাঙালির একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। প্রতিবছর আমরা নন্দনকাননে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে পিঠা উৎসবের আয়োজন করি। এ বছরও আমরা হরেক রকম পিঠা এনেছি অতিথিদের খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে ও আনন্দ উপভোগ করার জন্য।’
নন্দনকাননে নবনির্মিত একটি মঞ্চের উদ্বোধন শেষে সেখানে শুরু হয় গ্রামীণ লোকনৃত্য। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে ও পিঠাপুলির স্বাদ নিতে দূরদূরান্ত থেকে নন্দনকাননে ভিড় জমায় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। উৎসব প্রাঙ্গণে বেশির ভাগ নারীদের পরনে লাল শাড়ি। আর শিশু-কিশোরেরা পরেছে বাহারি রঙের জামা। সবার সরব উপস্থিতিতে উৎসবমুখর ছিল নন্দনকানন চত্বর।
উৎসবে আসা ব্যাংকার সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে গ্রামবাংলার পিঠাগুলোর নাম আমরা ভুলে গেছি। পিঠাগুলো পরিচিত করার জন্য নন্দনকানন প্রতিবছর আয়োজন করে উৎসবের। আমরা চাই, ভবিষ্যতে যেন এই আয়োজন অব্যাহত থাকে।’
বাবার সঙ্গে প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব দেখতে এসেছে সাফা মারওয়া নামের এক শিশু। সে বলে, ‘এখানে বিভিন্ন রকম পিঠা দেখছি, বিভিন্ন পিঠার নাম জানছি, যেটা আগে কখনো দেখিনি।’
আয়োজকেরা জানান, বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে নবান্ন উৎসব অন্যতম। নবান্ন ও পয়লা বৈশাখ বাদ দিলে বাঙালি সংস্কৃতি থাকে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে উৎসবের মাধ্যমে বাঙালির ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে ধারণা দেওয়া সম্ভব। বাঙালি একটি উদার, সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসবকে ধরে রাখতেই এই আয়োজন করা হয়েছে।
নন্দনকাননের সম্পাদক মায়া রানী বিশ্বাস বলেন, নবান্ন ও পয়লা বৈশাখ—এ দুটি অনুষ্ঠানই তাঁরা নন্দনকাননে উদ্যাপান করেন। প্রতিবছরের মতো এ বছরও নবান্ন উৎসব হচ্ছে। আগে নবান্ন উৎসব হতো যার যার ঘরে। নারীরা আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে পিঠা তৈরি করতেন। সেটি একটু ভিন্নভাবে উদ্যাপন করছেন। ঘরে ঘরে তৈরি করা সেই পিঠাগুলো এখানে এনে উৎসব করা হচ্ছে। উৎসব দেখতে মানুষ আসছেন, এটা দেখে তাঁরাও খুশি। বাঙালির কৃষ্টিকে ধরে রাখা এবং নতুন প্রজন্ম যাতে এই কৃষ্টিকে বয়ে নিয়ে যেতে পারে, সে জন্যই এ আয়োজন।