রাজনৈতিক হাঙ্গামায় ভাঙল হতদরিদ্রের দোকান, সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তা

রাজনৈতিক হাঙ্গামায় শৈলকূপা পৌরসভার সামনে থাকা আব্দুল করিমের চায়ের দোকানটি ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাজনৈতিক হামলায় দোকান হারিয়ে পথে বসতে চলেছেন করিম। রোববার সকালেছবি: প্রথম আলো

হতদরিদ্র আবদুল করিম। মাসে ৭০০ টাকায় জায়গা ভাড়া নিয়ে দোকান বসিয়ে পৌরসভার সামনে চা বিক্রি করেন। ওই চায়ের দোকানের আয় দিয়েই পাঁচজনের সংসার চলে। এক দিন দোকান বন্ধ হলে করিমের বাড়িতে চুলা জ্বলে না। গতকাল শনিবার রাতে রাজনৈতিক হাঙ্গামায় তাঁর দোকানটি ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে।

‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে একদল লোক পৌর কার্যালয়ে হামলা করতে এসে আবদুল করিমের চায়ের দোকানটি ভাঙচুর করে। করিমের ভাষ্য, তিনি রাজনীতির সাতপাঁচ বোঝেন না। কখনো মিছিল-মিটিংয়েও যাননি। এরপরও তাঁর দোকানটি এভাবে ভাঙল। প্রায় ৪০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন কীভাবে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবেন, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

আবদুল করিম (৩৬) ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার খালকুলা গ্রামের মসলেম আলী মণ্ডলের ছেলে। স্ত্রী বুলবুলি খাতুন, বড় মেয়ে সুমাইয়া পারভিন (১৮), ছোট মেয়ে শিমু পারভিন (১২) ও একমাত্র ছেলে সিহাব হোসেনকে নিয়ে তাঁর সংসার। এর মধ্যে ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ও একমাত্র ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ভ্যানচালক বাবার অভাবের সংসারে ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারেননি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় অন্যের জমিতে কাজ করতে যান। ১২ বছর আগে শৈলকুপা পৌরসভার সামনে নিজের খরচে একটি চায়ের দোকান বানিয়ে নেন। মাসে জায়গা ভাড়া দেন ৭০০ টাকা। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় শ টাকা আয় হয়। ওই টাকা দিয়ে বাচ্চাদের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ চলে। নিজের চাষযোগ্য জমি নেই। বাবার ভিটায় এক কক্ষের সেমিপাকা ঘরে বসবাস করেন।

দোকানে হামলার বর্ণনা দিয়ে আবদুল করিম বলেন, রাত আনুমানিক ৯টার সময় একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে পৌরসভায় হামলা করে। তখন তাঁর দোকানেও আক্রমণ করে। তিনি তাদের অনুনয়-বিনয় করে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, আমার পেটে লাথি মারবেন না। আমার দোকানটি ভাঙবেন না।’ কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেনি, উল্টো মারতে তেড়ে আসে। তিনি জীবনের ভয়ে দোকান থেকে পালিয়ে যান। হামলাকারীরা দোকানের সবকিছু ভেঙে রেখে গেছে। বিস্কুট-কলা খেয়ে ফেলেছে। মালামাল না থাকায় আজ দোকান খুলতে পারেননি।

আবদুল করিম বলেন, তাঁর দোকানে একটি টেলিভিশন, গ্যাসের চুলা, চেয়ার-টেবিল, বিস্কুট, চা, সিগারেটসহ আনুমানিক ৫০ হাজার টাকার মালামাল ছিল। এখন ভেবে পাচ্ছেন না, কীভাবে দোকানটি চালু করবেন? দোকান না চালালে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।

বাজারের ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, রাজনৈতিক বিরোধে হতদরিদ্র মানুষটির দোকান ভাঙার কোনো কারণ নেই। এভাবে গরিব মানুষেরা প্রতিনিয়ত ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

জানতে চাইলে পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, শৈলকুপা আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও একটি পক্ষ পায়নি। ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ওই হামলা করে। তিনি ঢাকায় ছিলেন। ফিরে এসে দেখেন, পৌরসভায় হামলা হয়েছে। পৌর ফটকের সামনে থাকা করিমের দোকানটিও ভাঙা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি কোনো রাজনীতি করেন না। তাহলে তাঁর দোকানটি ভাঙার কারণ কী? এখন লোকটা চলবে কীভাবে?

শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম হাকিম আহমেদ বলেন, মনোনয়ন ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটাতে পারেন। তবে তাঁদের শান্ত থাকার নির্দেশনা আছে। সবাইকে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পৌরসভার সামনের দোকানটি ভাঙচুর করার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।